ভোটে নেই জনগণের সম্পৃক্ততা। নেই তেমন তোড়জোড়। এরপরও ভোট পাহারা, টাকার ছড়াছড়ি, রাজনৈতিক দলাদলির কমতি নেই এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে। জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের নির্বাচনে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় উত্তেজনার কমতি নেই। কেন্দ্র পাহারা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল সবকিছুর আয়োজন রয়েছে নির্বাচনে। ফলে শঙ্কা রয়েছে সংঘর্ষের। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগই লড়াই করছে তার দলের অদৃশ্য ছায়ার সঙ্গে। এর কারণ, মাঠ পর্যায়ের গ্রুপিংয়ের কারণে আওয়ামী লীগের নেতারা একে অপরের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এদিকে- টাকার প্রবাহে যাতে ভোটের মাঠ প্রভাবিত করতে না পারে সে কারণে গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত নানা গুজব ছিল ভোটের মাঠে। সিলেট জেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই প্রায় একই ঘরানার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ এখানে সমর্থন দিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও প্রবীণ নেতা অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানকে। তিনি সদ্য সাবেক হওয়া প্রশাসকও। তার সঙ্গে রয়েছেন সিলেটের ম্যান ইউ কোম্পানির চেয়ারম্যান ও জৈন্তা ইমরান আহমদ কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যক্ষ ডক্টর এনামুল হক সর্দার। এছাড়া প্রার্থী হয়েছেন স্বাধীনতাত্তোর সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জিয়াউদ্দিন আহমদ লালা ও ফখরুল ইসলাম সোহেল। এই চারজনের মধ্যে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ও স্বতন্ত্র এনামুল হক সর্দার। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ই সমঝোতার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু লুৎফুর রহমানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সাড়া না দেয়ায় কোনো সমঝোতা হয়নি। এরপর থেকে চলে প্রচারণা। প্রচারণায় সব প্রার্থীর চেয়ে এগিয়ে ছিলেন অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান। নীরব প্রচারণা চালিয়েছে এনামুল হক সর্দার। আর জিয়াউদ্দিন লালা নজরকাড়া ইশতেহার ঘোষণা করে নির্বাচনী মাঠ জমিয়ে রাখেন। এদিকে, সোমবার প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত বিরামহীন প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা গোটা জেলার প্রায় ১০৫টি ইউনিট চষে বেড়িয়েছেন। কিন্তু গতকাল থেকে শুরু হয়েছে টাকার খেলা। টাকা নিয়ে ভোটের মাঠে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রটেছে নানা গুজব। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমানতালে ভোট কিনতে টাকা বিলিয়েছেন। এই অবস্থায় চলেছে ভোট পাহারাও। ফলে প্রকাশ্য টাকা নিয়ে চলাচল করা প্রার্থীর সমর্থকদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেটে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী কোটি টাকার উপরে অর্থ বিতরণ করেছেন বলে গতকাল ভোটের মাঠ থেকে ধারণা পাওয়া গেছে। এ কারণে রাতে সিলেটে রটেছে- ‘টাকা যার ভোট তার।’ সিলেটে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়ররা টাকা বিতরণ করেছেন। আর এক চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে টাকা বিতরণ করেছেন। সিলেটে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাতে প্রবাসীরাও ছুটে এসেছেন। তাদের কেউ কেউ টাকা বিতরণের মাধ্যমে ভোটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালান। সিলেটে ভোটের মাঠে টাকা ছেড়েছেন সদস্য প্রার্থীরা। এ কারণে সদস্য প্রার্থীরা ভোট পাহারায় ব্যস্ত ছিলেন। সিলেটের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী ফয়সল আহমদ মুন্না জানিয়েছেন, টাকায় ভোটের মাঠ প্রভাবিত না ঘটলে তিনি জয়ী হবেন। বিভিন্ন দলীয় প্রার্থীরা টাকা বিতরণ করে ভোটের মাঠকে অস্থির করে তোলেছেন। একই কথা বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থী হাসিনা বেগমের। তিনি বলেন, ভোটের মাঠে টাকার খেলা চলছে। আর এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে, ভোটের মাঠ যাতে টাকায় প্রভাবিত না করতে সে কারণে প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। গতকাল থেকে প্রশাসন মনিটরিং শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা। এদিকে, সিলেটের ওসমানীনগরের মঙ্গলচন্ডি কেন্দ্রের ভোট নিয়ে উত্তাপ বেড়েছে। কারণ, ওই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে গতকাল থেকে। সিলেটের জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ও সর্দার এনামুল হকের বাড়ি ওসমানীনগরে। ফলে ওসমানী নগরের কেন্দ্রে যাতে কোনো গোলযোগ না ঘটে সে কারণে প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। ওদিকে, জেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন সিলেটে যন্ত্রচালিত যানবাহন-নৌ-যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সোমবার রাতে এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ। মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- ২৮শে ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন-২০১৬ উপলক্ষে সিলেট সদর উপজেলার কোতোয়ালি মডেল থানাধীন মদন মোহন কলেজ, সিলেট এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলাধীন মোগলাবাজার থানাধীন ইছরাব আলী হাই স্কুল ও কলেজ, কুচাই, মোগলাবাজার, সিলেট ভোট কেন্দ্রসমূহে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স’র স্মারক মূলে জারিকৃত পরিপত্রের নির্দেশনার আলোকে নির্বাচনের আগের দিন অর্থাৎ ২৭শে ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ভোট গ্রহণের দিন অর্থাৎ ২৮শে ডিসেম্বর ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রের আশপাশ এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, বেবি ট্যাক্সি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো ও ইজিবাইক চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেটে সর্বোচ্চ সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান। গতকাল তিনি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। এ সময় জেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য সিলেট জেলা পুলিশের সকল সদস্যদের পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ড.আ.ক.ম. আকতারুজ্জামান বসুনিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কবীর আহম্মেদ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.