চলতি বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ-বর্জন দুটোতেই ছিল বিএনপি। আন্দোলনের বদলে সংগঠন গোছানোর দিকে মনোযোগ দেয় দলটি। জাতীয় সম্মেলন করে মহাসচিব পদে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে স্থায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে সর্বস্তরে দল গোছানোর উদ্যোগ কার্যত সফল হয়নি। ২০১৬ সালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলার ঘটনা খুব একটা ঘটেনি, আগের ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মতো। তবে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানসহ সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মামলাগুলো আরও সচল হয়েছে। বছরজুড়েই সরকার দলটিকে চাপে রেখেছে। মাঠে সভা-সমাবেশ করার অধিকারও সংকুচিত করা হয়। এরপরও সারা বছর নানা ইস্যুতে আলোচনায় ছিল সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি। কয়েক দফা পিছিয়ে ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন করে বিএনপি। এটাকেই বছরের বড় অর্জন বলে মনে করছে তাঁরা। কিন্তু সম্মেলনের পর ৫০২ সদস্যের ‘ঢাউস’ কমিটি ঘোষণা নিয়ে দলের ভেতরেই বিতর্ক ওঠে। বছরজুড়ে বিএনপির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্তিমিত ছিল। এবার ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়া জন্মদিনের কেক কাটেননি, যা ব্যতিক্রম। এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে আলোচিত গুম, খুনের ঘটনা থেকে জঙ্গিবাদ, সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, কিংবা সুন্দরবনের পাশে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন—সব ইস্যুতেই দলটি সরব ছিল। তবে কোনো ইস্যুতে মাঠের কর্মসূচিতে যায়নি। ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় নৃশংস জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয় বিএনপি। সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি কনভেনশন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা-ও সফল হয়নি। এ বছর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা আর এ গণি ও আ স ম হান্নান শাহকে হারিয়েছে বিএনপি। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। দেখা গেছে, বছরজুড়ে দিবসভিত্তিক ঘরোয়া আলোচনা আর বিষয়ভিত্তিক সভা-সেমিনারে সক্রিয় ছিলেন বিএনপির প্রথম সারির নেতারা। এর বাইরে মোটা দাগে সংবাদ সম্মেলনের মধ্যে ছিল দলটি। এর মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে তিনি সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। সর্বশেষ ১৮ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ১৩ দফা প্রস্তাব দেন। এর রেশ ধরেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ২০১৬ সালকে দলের জন্য ঘটনাবহুল বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ বছর বিএনপি সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। একই সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন জাতীয় স্বার্থে কিছু ইতিবাচক প্রস্তাব দিয়েছেন। বছরের শেষ প্রান্তে, ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। নেতারা বলছেন, তাঁরা স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন বর্জন করেছেন বুঝে-শুনে। কারণ দলটি জানে, এ নির্বাচনে তাদের কিছু অর্জনের সুযোগ নেই। ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বিএনপি তাদের মাঠে ফেরার মঞ্চ হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু সেখানেও বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে দলটি। এর পেছনে দলের স্থানীয় নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি সরকারি ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ফলে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক কৌশল ঠিক করার ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের অভিজ্ঞতা দলটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.