সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। এমনটা অনুমান করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান ব্যাংককে বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি খুবই অনিশ্চিত এবং পালিয়ে আসা শরণার্থীর প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে। বার্তা সংস্থা এএফপিকে ভিভিয়ান বলেন, বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে তাদের অনুমান, কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গা হয়তো বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে রক্তাক্ত দমন অভিযান চালাচ্ছে, তাতে ঘরছাড়া হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ। তারা সেখান থেকে পালাচ্ছেন। এদিকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরা যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারেন, সেজন্য সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন, সে কথা স্বীকার করেছে বাংলাদেশ সরকারও। রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা। মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের সমতুল্য হতে পারে। মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন এর মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মংদ্য এবং রাথিদুয়াং এলাকায় বর্ডারগার্ড পুলিশের তিনটি সীমান্ত চৌকিতে হামলার পর থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সেখানে নিরাপত্তা অভিযান চলাকালে মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের রিপোর্ট পেয়েছে। হাই কমিশনার এসব রিপোর্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে রয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গণহারে মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংসযজ্ঞ, ঢালাও গ্রেপ্তার ও যৌন নির্যাতন। এছাড়া, উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার প্রচারণা চলছে। মিয়ানমার সরকার এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে দাবি করেছে তারা রোহিঙ্গা ‘জঙ্গিদের’ দমনে অভিযান চালাচ্ছে। রাভিনা শামদাসানি রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলারের বিবৃতিতে আরো বলেন, নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রচেষ্টাগুলো যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানদণ্ডে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত থাকে তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তিনি মিয়ানমারের কাচিত ও শান রাজ্যেও নিরাপত্তা বাহিনীর আগ্রাসনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা এবং সহিংসতা আক্রান্ত এলাকাগুলোতে মানবাধিকার সহায়তা প্রবেশের অবাধ সুযোগ দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও গৃহহীন হয়ে পড়া অভ্যন্তরীণ জনসংখ্যার অধিকার রক্ষার প্রতি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। এমনটা করতে অব্যাহতভাবে ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসবে। রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি অ্যাডভাইজরি কমিশন গঠন সত্ত্বেও এ বছরের জুনে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের একটি রিপোর্টে করা সুপারিশ মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে সরকারের বহুলাংশে ব্যর্থতায় হতাশা ব্যক্ত করেন হাই কমিশনার। ওই রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের নানা ঘটনা উঠে এসেছিল। এসব নিপীড়নের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাতীয়তা থেকে বঞ্চিত করা, চলাচলের স্বাধীনতার ওপর মারাত্মক সীমাবদ্ধতা, জীবন ও নিরাপত্তার ওপর হুমকি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার অস্বীকার, বলপূূর্বক শ্রম, যৌন সহিংসতা এবং রাজনৈতিক অধিকারের সীমাবদ্ধতা। ওই রিপোর্টে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ধরন থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.