কাকরাইলের বাসিন্দা মো. শামসুল হক। জরুরি কাজে যাবেন গুলশানের নতুনবাজার। বেলা ১১টার দিকে কাকরাইল থেকে উঠেছেন সদরঘাট-গাজীপুর রুটের একটি বাসে। এক ঘণ্টা পার হলেও দুপুর ১২টার সময় তাকে বহনকারী গাড়িটি তখন মৌচাক এলাকায়। ক্ষোভ মেশানো কণ্ঠে মো. শামসুল হক বলেন, এই শহরে আর বাস করা যাবে না। এভাবে আর কতদিন। ফ্লাইওভারের কাজ চলছে দিনের পর দিন। তবু কাজের কোনো উন্নতি নেই। গাজীপুরগামী বাসের আরেক যাত্রী সাদেক মিয়া যানজটে বসে থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলেন। তিনি বলেন, যদি হেঁটেও যেতাম এতক্ষণে গন্তব্যে চলে যেতাম। শুধু শামসুল হক কিংবা সাদেক নন। রাজধানীর মগবাজার-মালিবাগ-মৌচাক সড়কে চলাচলকারি শ’ শ’ যানবাহনের যাত্রীদের একই অভিযোগ। এখানকার যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু ওই এলাকার হাজারো মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ব্যস্ততম এ এলাকায় যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা, রাস্তায় ছোট-বড় গর্তে কাদা-পানি জমে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। একদিকে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ অন্যদিকে চলছে ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিসহ সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে, এ এলাকায় রাস্তা বা ফুটপাতগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠছে দিন দিন। ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ব্যস্ততম এই সড়কে যানজট লেগেই থাকে। কাকরাইল মোড় থেকে মালিবাগ রেলগেইট এবং মগবাজার পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারের মতো পথ বাসে বা রিকশায় যেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। কখনও এর চেয়েও বেশি সময় লেগে যায়। সরজমিনে দেখা গেছে, বাংলামটর থেকে মগবাজার এবং মগবাজার থেকে মৌচাক, মালিবাগ মোড় পর্যন্ত সড়কে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের রড, লোহার এঙ্গেলসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে ব্যস্ততম সড়কে। ফলে সরু রাস্তা আরও সরু হয়ে গেছে। নির্মাণ কাজ চলা এলাকায় রাস্তাগুলো খানাখন্দ ও ধুলাবালিতে ভরে আছে। অল্প বৃষ্টি বা প্রকল্প নির্মাণকাজে ব্যবহৃত পানি রাস্তায় জমে থাকলে সেখানে রিকশা উল্টে যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। এলাকাবাসী ও বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীরা জানান, এখন শুষ্ক মৌসুম। তাই এই এলাকা এখন ধূলোবালিতে একাকার। আর সামান্য বৃষ্টি হলেতো কোনো কথাই নেই। গেল বৃষ্টির মৌসুমে ভোগান্তি শিকার হয়েছে মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক এলাকায়। সরেজমিন দেখা গেছে, পানি নিষ্কাশনের জন্য ঐ এলাকায় ফুটপাত কেটে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ড্রেন তৈরি করায় ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের হাঁটার কোনো উপায় নেই। একদিকে চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ, অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ। ফলে একদিকে যেমন রাস্তা ছোট হয়েছে, অন্যদিকে ফুটপাতগুলোও হয়ে উঠেছে ব্যবহারের অনুপযোগী। মাঝে মধ্যে এমন অবস্থা হয় যে, কর্দমাক্ত সড়ক ও ফুটপাত ব্যবহারের উপায় থাকে না সাধারণ মানুষের। বৃস্পতিবার সকালে মৌচাক, মালিবাগ রুটের বেশকজন পরিবহন চালকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এই রুটে যানজট থাকার কারনে এখন আর আগের মতো ট্রিপ হয় না। কাকরাইল থেকে রামপুরা যেতেই সময় লাগে এক ঘণ্টার বেশি। এমনও হয়েছে যাত্রীরা বাস থেকে নেমে ভাড়া নিয়ে হেটে চলে যান গন্তব্যে। নতুবা বিকল্প চিন্তা করেন যাত্রীরা। ওই সড়কে চলাচলকারী ভিক্টর পরিবহনের চালক মো. হুমায়ুন বলেন, জ্যামের কারণে এই রুটে এখন আগের মতো ট্রিপ পাইনা। দিনরাত জ্যাম লেগেই থাকে। রাজধানীর যানজট নিরসনে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদন লাভ করে। চার লেনবিশিষ্ট ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি এ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। চুক্তি অনুয়ায়ী দুই বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের নকশা সংশোধন এবং নির্মাণকাজের সময়সীমা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এ বিষয়ে ফ্লাইওভার সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি।তবে মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা হাতেম আলী বলেন, ফ্লাইওভারে নিচের অংশে আমাদের কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে। তবে নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ির কাজটা করছে ঢাকা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পাািন (ডিপিডিসি)। তিনি বলেন তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ৩২ কেভি লাইন স্থাপনের জন্য এই খোঁড়াখুঁড়ি আরো সপ্তাহখানেক চলবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.