জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি), প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও (ইইসি) পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার সারা দেশে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে। এতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। ফলে সারা দেশে হাসি-আনন্দ ও মিষ্টি বিতরণের বন্যা বইছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার কারণে এই ভালো ফল। জানা গেছে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী, পাসের হার, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান, শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্র সংখ্যা এবং প্রতিষ্ঠান সংখ্যা- এ আটটি সূচকের সবগুলোই এবার ঊর্ধ্বমুখী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। এ প্রচেষ্টা ধরে রাখতে হবে। এ বছর ভালো ফলের পেছনে যে বিষয়গুলো নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে তা হল- ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে পাসের হার বাড়া, সৃজনশীল পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা না থাকা। এসব বিষয় পর্যায়ক্রমে বাড়ানো গেলে আরও ভালো ফল আসার পাশাপাশি শিক্ষার মান বাড়বে বৈকি। একটা বিষয় লক্ষণীয়, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষার এই ফলে তিনি খুশি হলেও সন্তুষ্ট নন। আমরাও মনে করি, পাসের হার শতভাগ করা এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিশ্বমানের শিক্ষা দেয়া নিশ্চিত না করা পর্যন্ত সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ শিক্ষাব্যবস্থা যত উন্নত ও মানসম্মত হবে দেশও তত এগিয়ে যাবে। এবারের ফলাফলে ইতিবাচক দিক হল- খাতায় লেখার ওপর ভিত্তি করেই শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কোনো বাড়তি নম্বর ও পাস করিয়ে দেয়ার নির্দেশনা ছিল না- প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীর এ দাবি যদি সঠিক হয়, তবে বিষয়টি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ নম্বর বাড়িয়ে পাস করানোর মানে হল ভবিষ্যতে জাতিকে মেধাশূন্য করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দেয়া। এটা কাম্য হতে পারে না।
স্বরণ করা দরকার, প্রতি বছর পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আনন্দের বন্যায় ভাসে গোটা জাতি; কিন্তু মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় নগণ্য সংখ্যকের উত্তীর্ণের কারণে সে আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়। এর নেপথ্যের কারণ অজানা নয়। কোচিং, নোট ও গাইডবই পড়ে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার ভর্তি পরীক্ষায় ব্যতিক্রমী প্রশ্নের সামনে ভেঙে পড়ে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ এবং শিক্ষার্থীদের বেসিক মজবুত করতে পাঠ্যবইয়ে ফেরানোর উদ্দেশ্যেই দেশে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয়। আশার কথা হচ্ছে, সৃজনশীল পদ্ধতি কাজ করতে শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, সৃজনশীলে অভ্যস্ত হওয়া এ বছর জেএসসিতে ভালো ফলের একটা নিয়ামক। কিছু কিছু স্থানে পরিচিত মেধাবীদের তুলনায় কম মেধাবীরা ভালো ফল করা তারই প্রমাণ। প্রশ্ন হচ্ছে, সৃজনশীল পদ্ধতি কাজ করতে শুরু করলে কোচিং, নোটবই ও গাইডের বিরুদ্ধে অবস্থান থেকে কেন সরে আসা হচ্ছে? শোনা গেছে, সহায়ক বই নামে এগুলোকে আইনসিদ্ধ করা হচ্ছে। অথচ কোচিং, নোট, গাইড নিষিদ্ধ করে সৃজনশীল শিক্ষক-ছাত্র প্রশিক্ষণে জোর দিলে শিক্ষার মান উন্নত ও ফল আরও ভালো হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। পিইসি ও জেএসসিতে উত্তীর্ণদের অভিন্দন। তাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ- এটাই প্রত্যাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.