বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের জঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) এ এন এম মুনিরুজ্জামান।
প্রথম আলো: ২০১৬ সালে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতাকে কীভাবে দেখছেন? মুনিরুজ্জামান: এ বছর দেশে জঙ্গিবাদ নতুন মাত্রায় ব্যাপকভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিশেষ করে আমরা দেখতে পাই, জঙ্গিরা টার্গেট কিলিং করেছে। তারা বিদেশি নাগরিক, হিন্দু পুরোহিত, খ্রিষ্টান, শিয়া সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর হামলা করেছে। হলি আর্টিজানে হামলা চালিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এমনটা আগে কখনো এ দেশে হয়নি। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের ম্যাপে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আমরা নতুন মাত্রায় আত্মঘাতী হামলা দেখেছি। মহিলা আত্মঘাতী হয়েছে। ফিমেল র্যা ডিকালাইজেশনের নতুন প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। পরিবারভিত্তিক টেরর ইউনিট গড়ে উঠেছে। আমরা নারী জঙ্গিদের নতুন আঙ্গিকে দেখতে পাচ্ছি। সার্বিকভাবে ২০১৬ সালে জঙ্গিবাদের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। প্রথম আলো: জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান তৎপরতাকে কতটা যথার্থ মনে করেন? মুনিরুজ্জামান: বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকাণ্ডে একটা সাফল্য দেখতে পাচ্ছি। তবে সেটা ট্যাকটিক্যাল লেভেলের সাফল্য। এ ধরনের সাফল্য সাময়িক। সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বড় ধরনের কৌশলগত অ্যাপ্রোচ থাকা দরকার। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে। অন্যথায় এই সমস্যার সমাধান করতে পারব না। কিন্তু জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করার জন্য যে ধরনের রাষ্ট্রীয় কৌশল থাকা দরকার, সে ধরনের সার্বিক বড় কৌশলনীতি এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নেই। প্রথম আলো: ২০১৭ সালে জঙ্গিবাদ নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি? মুনিরুজ্জামান: আন্তর্জাতিকভাবে জঙ্গিবাদ প্রসার ঘটছে। এর প্রভাব বিভিন্ন দেশে পড়ছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়তে পারে। এ ছাড়া অভিনব পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশে হামলা হচ্ছে। যেমন ইউরোপে ট্রাক নিয়ে হামলা হয়েছে। এসব পদ্ধতি বা কৌশল আমাদের দেশের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোও অনুসরণ করতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন চলছে। যার জের ধরে ওই দেশের রাখাইন রাজ্যে নতুন জঙ্গিগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তার নাম হরকাত আল-ইয়াকিন। এর প্রভাব কেবল রাখাইন রাজ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্য এলাকায়, বিশেষ করে আমাদের এলাকায়ও পড়তে পারে। এই ব্যাপারে বিশেষভাবে সজাগ থাকার দরকার মনে করছি।
সূএ:প্রথম আলো
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.