রাজধানীতে ২০১৬ সালে বাড়িভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছর নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ হারে বাড়িভাড়া বেড়েছে।
ক্যাবের হিসাবে গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৮৮ শতাংশ। অথচ একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ। অর্থাৎ নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিবারের মতো এবারও বছরের শুরুতে বাড়ির মালিকেরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।
ক্যাবের ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ভাড়া বাসায় বসবাস করেন এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীর মোট আয়ের একটা সিংহভাগ বাড়িভাড়ায় খরচ হয়। ২০১৬ সালে ঢাকা শহরে বাড়িভাড়া সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পাকা টিনশেডে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, ফ্ল্যাটে বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, মেস রুমে বেড়েছে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বস্তিতে বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
আয় বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়িভাড়ার বৃদ্ধির এই হার অনেক ক্ষেত্রেই অসংগতিপূর্ণ বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তাতে বলা হয়, বাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমানের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ক্যাবের সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তিনি প্রতিবেদনের সুপারিশে বলেন, ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের সংস্কার করে ভাড়াটেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এই আইন অনতিবিলম্বে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে ভাড়াটেদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দিয়ে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট তৈরি ও বরাদ্দের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়।
গোলাম রহমান বলেন, ভাড়াটেরা বাড়ির মালিকদের কাছে জিম্মি। সরকার কখনোই ভাড়াটেদের পক্ষে ন্যায্য পদক্ষেপ নেয়নি। ভাড়াটেদের চাহিদার সুযোগ নিয়ে বাড়ির মালিকেরা ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছেন।
বর্তমানে প্রচলিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি ১৯৯১ সালের। কিন্তু সরকার এখনো এই আইনের বিধি করেনি। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ কার্যকর করতে ২০১০ সালে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিল। রিট আবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে রুল ও চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১ জুলাই আদালত রায় দেন। রায়ে বলা হয়, বিদ্যমান আইনটি কার্যকর না হওয়ায় ভাড়াটেকে সুরক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। আইনটি কার্যকরে রাষ্ট্রকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষ এ থেকে পরিত্রাণ পাবে না।
রায়ে সারা দেশে এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বাড়িভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারকে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। রায় ঘোষণার ছয় মাসের মধ্যে কমিশন গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু রায় ঘোষণার দেড় বছর পেরোলেও বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠিত হয়নি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.