রাজধানীর মগবাজারে প্রায় দু’মাস আগে নিজ কক্ষে রহস্যজনক খুন হন ডলি রাণী বণিক (৪৬)। ফ্ল্যাটের বন্ধ দরজা-জানালা না খুলে সীমানা প্রাচীর ও ভবন টপকে পেছন দিয়ে ঢুকে রান্নাঘরের বঁটি দিয়ে গলা কেটে খুনের এই ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছিল। ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এখনো আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটির কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি পুলিশ। উদ্ঘাটন হয়নি রহস্য। গত ৮ই নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের পর ১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করেন রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান। তিনি মানবজমিনকে বলেন, ঘরের দরজা-জানালা ব্যবহার না করে পেছন দিয়ে ঢুকে ঘটানো এই হত্যাকাণ্ডটি ছিল অভিনব। খুনিরা সরেও পড়ে একই পথ দিয়ে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আমরা নানা বিষয় সামনে রেখে তদন্ত কাজ পরিচালনা করেছি। এখনো কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্য ও সন্দেহভাজন দু’জনকেও বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদেরও কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও ডিএনএ রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। এ অবস্থায় মামলাটি গত ১৮ই নভেম্বর ডিবিতে স্থানান্তর হয়েছে। ডিবিতেও মামলাটির কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর আগে থেকেই মগবাজারের মধুবাগ এলাকার উজ্জীবন গলির ১০/ই/৮ নম্বর ইছামতি হাউজের চতুর্থ তলায় দু’কক্ষের ফ্ল্যাটে থাকতেন ডলি। তার স্বামী সজল বণিক মালয়েশিয়া প্রবাসী। দু’সন্তান জুয়েল বণিক ও দীপ্ত বণিকের পড়াশুনার জন্যই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজ বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি। তার মেয়ে ঝুমা বণিক ভারতে স্বামীর সঙ্গে থাকেন। তারা মায়ের মৃত্যুর পর ঢাকায় এসে আবার ভারতে ফিরে গেছেন। মা’র মৃত্যুর পর এরইমধ্যে নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটির ফার্মাসি বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করার পর ল্যাবে গবেষণার কাজ করছেন জুয়েল। আর দীপ্ত নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর সমপ্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ভর্তি হয়েছেন। গত মাসের প্রথমদিকে মামলার বাদী সজল বণিক স্ত্রী হত্যার রহস্য না জেনেই অতৃপ্ত মনে আবার মালয়েশিয়ায় কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। আর গত ২৮শে নভেম্বর জুয়েল ও দীপ্ত ঘটনাস্থল ইছামতি হাউজ ছেড়ে অন্য বাসায় উঠেন। ছাড়েন মগবাজার এলাকাও। জানা যায়, গত ৮ই নভেম্বর সন্ধ্যা গড়াতেই ইছামতি হাউজে ডলিকে খুন করা হয়। তখন বাড়ির বাইরের লোহার গেট বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল ফ্ল্যাটটির দরজাও। পেছনের বেলকনি দিয়ে দুর্বৃত্তরা তার ফ্ল্যাটে ঢুকে। শোবার ঘরেই বঁটি দিয়ে তার গলা কাটা হয়। আবার সে পথ দিয়েই বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এর বেশি কিছু আজও জানতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর ডলি বণিকের ভাই বাবুল বণিককে সন্দেহভাজন হিসেবে বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ। বাবুল ডলির কাছ থেকে নেয়া মোটা অঙ্কের টাকা না দিতেই বার বার হুমকি দেয়ার এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সন্দেহ করছিল ডলির স্বামী-সন্তান। ডলির কাছ থেকে টাকা ধার নেয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অপর এক ব্যক্তিকেও সন্দেহের তালিকায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু ঘটনার ১ মাস ২৪ দিন পরও হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি প্রথম থেকে মামলার তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তা। গত ১৮ই নভেম্বর মামলা তদন্তের ভার পড়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক বাহা উদ্দিনের কাছে। ডিবির কাছে মামলা তদন্তের ভার পড়ার প্রায় অর্ধমাসেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এর মধ্যে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তদন্ত কর্মকর্তার কথা হয়নি। নিহত ডলির বড় ছেলে জুয়েল বণিক বলেন, মামলাটি তদন্তের ভার সমপ্রতি রমনা থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তর করা হলেও এ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি। প্রায় অর্ধমাস আগে স্থানান্তর হলেও এখন পর্যন্ত পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গেও কথা বলেননি নতুন তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার অগ্রগতি জানার জন্য আমি গত ২৩ তারিখে ফোন দিলেও তদন্ত কর্মকর্তা নতুন কোনো সংবাদ জানাতে পারেননি। ডিএনএ রিপোর্টও দেয়া হয়নি। যত দেরি হচ্ছে ততই তৎপরতা কমছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা চাই খুনের রহস্য উদঘাটন হোক। প্রকৃত খুনি ধরা পড়ুক। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ক্লুও না পাওয়াটা তো আমাদের জন্য হতাশাজনক। একাধিকবার চেষ্টা করেও মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.