ঝামেলা চলছিল অনেক দিন ধরেই। একদিকে লোধা কমিটির সুপারিশ মানতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা, অন্যদিকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সেই নির্দেশনা মানতে অনীহা। দুইয়ের দ্বন্দ্বে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার অচলাবস্থাও সৃষ্টি হয়েছে বিসিসিআইতে। তাতেও গা করেননি বিসিসিআই কর্তারা। অবশেষে কঠিন পথেই হাঁটলেন সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এক রায়ে বরখাস্ত করেছেন বিসিসিআই সভাপতি অনুরাগ ঠাকুরকে। অপসারিত হয়েছেন বোর্ড সচিব অজয় শিরকেও।
এখানেই শেষ নয়। আদালতের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা ও শপথ নিয়ে মিথ্যা বলার অভিযোগে কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিশও দেওয়া হয়েছে অনুরাগ ঠাকুরকে। লোধা কমিটির সুপারিশকে বোর্ডের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ বলে দাবি করে আইসিসির কাছে চিঠি লিখেছিলেন ঠাকুর। যেটি তিনি আদালতে অস্বীকার করেছেন। কিন্তু আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন ভারতীয় একটি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
আইপিএলে ফিক্সিং তদন্তের সূত্র ধরে ভারতীয় ক্রিকেট ও এর প্রশাসনে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে তখন সাবেক বিচারপতি আর এম লোধার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। ২০১৫ সালে গঠিত এই কমিটি বেশ কিছু নির্দেশনা ও সুপারিশ দিয়েছিল গত বছর জুলাইয়ে। লোধা কমিটির সুপারিশ মেনে নিতে শীর্ষ আদালত ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন বিসিসিআইকে। কিন্তু বিসিসিআই উল্টো জানিয়ে দেয়, বেশির ভাগ সুপারিশ মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কার্যত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কোনো সুপারিশই মানেনি বিসিসিআই।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ কাল রায়ে জানিয়েছেন, নতুন কমিটি হওয়ার আগ পর্যন্ত বোর্ডের জ্যেষ্ঠতম সহসভাপতি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যুগ্ম সচিব পালন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সচিবের দায়িত্ব। নতুন কমিটি গঠনের জন্য সংবিধান বিশেষজ্ঞ ফলি নরিম্যান ও অ্যামিকাস কিউরি গোপাল সুব্রামনিয়ামকে নিয়ে একটি প্যানেল গড়ে দিয়েছেন শীর্ষ আদালত। ১৯ জানুয়ারির মধ্যে এই প্যানেল বিসিসিআইয়ের জন্য একটি অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন করে দেবেন। একই দিনের মধ্যে অনুরাগ ঠাকুরকেও কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিসিসিআইয়ের বর্তমান প্রশাসন ও ভারতের রাজ্য ক্রিকেট বোর্ডগুলোকে এই মর্মে মুচলেকা দিতে হবে যে তারা লোধা কমিটির সুপারিশ মেনে চলবে।
সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের পর সংবাদমাধ্যমে কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে স্বভাবতই খুব সতর্ক অনুরাগ ঠাকুর। তবে টুইটারে প্রকাশিত তাঁর এক বিবৃতিতেই বোঝা গেছে ক্ষোভটা, ‘মাননীয় আদালতের রায়কে দেশের অন্য সব নাগরিকের মতো আমিও শ্রদ্ধা করি। আদালত যদি মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের অধীনে বিসিসিআই ভালো চলবে, আমার পক্ষ থেকেও বোর্ডের জন্য শুভ কামনা রইল।’
ইংল্যান্ড সফরে থাকা অজয় শিরকে সিএনএনকে বলেছেন, ‘বরখাস্ত হয়েছি বলে আমার কোনো অপরাধবোধ নেই। কারণ ওখানে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল না। আমি এখন আমার নিজের কাজে ফিরে যাব।’
ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাবটা যাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটি দিয়েছিল, সেই বিচারপতি আর এম লোধা অবশ্য বেশ সন্তুষ্ট, ‘অনিবার্য পরিণতি হিসেবে এটাই ঘটার কথা ছিল। আমাদের সবারই মাথায় রাখতে হবে, এটা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। এ দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে নির্দেশ দেন সেটি যে কাউকে মানতে হবে। এর ঊর্ধ্বে কেউ নয়।’
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও ধনী ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানও না!
এএফপি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.