ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে গত বছরের গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে, তাতে একটি উদ্বেগজনক চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, গত বছর গ্যাস খাতে সরবরাহ এবং দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা- কোনোটিরই উন্নতি ঘটেনি। এতে আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক গ্রাহকের অর্থে সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হলেও সেই তহবিলের ব্যবহার হয়েছে অনেকটা অস্বচ্ছতার সঙ্গে। গ্যাস একটি প্রাকৃতিক সম্পদ এবং তা অফুরন্ত নয়। প্রকৃতিপ্রদত্ত এই সম্পদের সুষ্ঠু বিতরণ ও ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতিসহ অনেক কিছুই। পৃথিবীর সব দেশেই প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হয় অর্থনীতির ভাষায় যাকে বলা হয় অপরচুনিটি কস্টকে। অর্থাৎ প্রাকৃতিক সম্পদ কোন কোন খাতে ব্যবহার করলে লাভবান হওয়া যাবে সেই হিসাব কষা। প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও থাকতে হয় অর্থনৈতিক সুবিবেচনা। আমাদের বিশেষত গ্যাসসম্পদের ক্ষেত্রে এসব বিষয় সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান হয়। দ্বিতীয়ত, গ্যাসসহ সব প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধের বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। দেশে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের অপচয় যে হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশের শিল্প খাতকে গ্যাস সরবরাহের প্রশ্নে অগ্রাধিকার দেয়াই অর্থনীতির বিবেচনায় সবচেয়ে লাভজনক। কিন্তু লক্ষ করা যাচ্ছে, শিল্প খাত প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছে না। এ খাতে গ্যাস সরবরাহের বিষয়ে উদ্যোক্তারা সম্মুখীন হয়ে থাকেন নানা জটিলতার। এ জটিলতার পেছনে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা অনেকাংশেই দায়ী। গত বছর বিদ্যুৎ খাতে আমরা বেশ উন্নতি লক্ষ করেছি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বেড়েছে এবং গ্রাহক পর্যায়ে দুর্নীতি কমেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার করে সিলেটের বিবিয়ানায় স্থাপিত হচ্ছে একটি বড় আকারের বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কিন্তু গ্যাস খাতে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। এমনকি গ্যাস সরবরাহ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আবেদন করেছে।
ক্যাব চলতি বছরে গ্যাস খাতে বিরাজমান অচলাবস্থা দূর করতে সরবরাহ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছে। তারা ভোক্তা প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে গ্যাস খাতে একটি শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে এবং বলেছে, এর কোনো বিকল্প নেই। আমরাও মনে করি, এ ধরনের একটি কমিটি গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, এ কমিটি গঠন করার পর সেটা যেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। অতীতের উন্নয়ন তহবিলগুলো কেন ইতিবাচক ফল দিতে পারেনি, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রস্তাব করেছে কোম্পানিগুলো, সেটাও পর্যালোচনার দাবি রাখে। ভোক্তার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে, ক্যাবও বলেছে একই কথা। সবশেষ কথা, গ্যাস খাতের সব ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা রোধ করে এ সম্পদের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং তা অর্থনৈতিক দৃষ্টিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.