চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যভর্তি কনটেইনারের ওপর দ্বিগুণ ডেমারেজ আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা না আসা উদ্বেগজনক। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যবসায়ীরা সব ধরনের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই গত বছর ২৬ ডিসেম্বর থেকে আমদানি পণ্যভর্তি এফসিএল (ফুল কনটেইনার লোড) কনটেইনারের ওপর দ্বিগুণ হারে ডেমারেজ চার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। এতে আমদানিকারকরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম চেম্বার ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে বন্দর কর্মকর্তারা ব্যবসায়ী নেতাদের কনটেইনার ডেলিভারি নেয়ার পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ জানান। বিষয়টি চারদিন পর্যবেক্ষণের পর দ্বিগুণ ডেমারেজ আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। সোমবার সেই চারদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও দ্বিগুণ ডেমারেজ আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা না আসায় বন্দর ব্যবহারকারীরা উদ্বিগ্ন। তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি। এ চিঠিতে বলা হয়েছে, দ্বিগুণ ডেমারেজ আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে সব ধরনের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন ব্যবসায়ীরা। দেশের আমদানি-রফতানির সিংহভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সরকারের রাজস্ব আয়ের বড় একটা অংশ আসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রাখলে এ বন্দরের কার্যক্রম স্বভাবতই স্থবির হয়ে পড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সামগ্রিক অর্থনীতি। প্রশ্ন হল, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা না করে কেন আমদানিকারকদের ওপর জরিমানা আরোপ করা হচ্ছে? এমনিতেই আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে জাহাজজট ও কনটেইনারজটের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তার ওপর কনটেইনার ডেমারেজ চার্জ দ্বিগুণ হলে তা ব্যবসায়ীদের সহ্যের বাইরে চলে যাবে। এতে পণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি গোটা অর্থনীতিতে পড়বে বিরূপ প্রভাব।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কনটেইনার বন্দর ইয়ার্ডে জমে যাওয়ায় আমদানিকৃত পণ্যভর্তি কনটেইনারের ওপর দ্বিগুণ ডেমারেজ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, বন্দরের সক্ষমতা বাড়িয়ে এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। কর্তৃপক্ষের সক্ষমতার অভাবের দায় ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক। ব্যবসায়ীরা কেন এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত মেনে জরিমানা দিতে যাবেন তা বোধগম্য নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, অনেক ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে কনটেইনার জেটিতে ফেলে রাখেন, তাই জরিমানা দ্বিগুণ করা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য হল, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি সময় কনটেইনার ফেলে রাখলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতেই পারে, কিন্তু ঢালাওভাবে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অযৌক্তিক। বস্তুত রফতানির ক্ষেত্রে যত দ্রুত পণ্য ক্রেতার কাছে যাবে, রফতানিকারক তত দ্রুত তার পুঁজি ও লাভ বুঝে পাবেন। অন্যদিকে আমদানির ক্ষেত্রেও দ্রুত ক্রয়কৃত পণ্য হাতে এলে তা দ্রুত কাজে লাগানো যাবে। কাজেই ব্যবসায়ীরা কখনও চান না কনটেইনার বেশি সময় ফেলে রাখতে। এ বাস্তবতায় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.