শীতের কাপড় বিক্রেতাদের অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে। গত দু’দিন ধরে বইছে হিমেল হাওয়া। দিনে কিছুটা গরম থাকলেও বিকাল গড়াতেই অনুভূত হচ্ছে শীত। আর এ অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে হকাররা। মুখে হাসি ফুটেছে। আশায় বুক বাধছে এবার হয়তো বিক্রি হবে শীতবস্ত্র। আর এমন লক্ষণও দেখা গেছে শীত মৌসুমের শেষ দিকে এসে। রাজধানীর গুলিস্তান, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, গাউসিয়া, হকার মার্কেট, মৌচাক, মতিঝিল সোনালী ব্যাংক ও আইডিয়াল স্কুলের সামনে, মহাখালী, পল্টন, উত্তরা, বাড্ডা, তালতলার ফুটপাথ ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ভাসমান এসব শীতবস্ত্রের দোকানে ভিড় করছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, বড়দের তেমন একটা বিক্রি না হলেও ছোটদের বিক্রির কমতি নাই। বাসাবোর বাসিন্দা শাহনাজ বেগম। শীতবস্ত্র কিনতে এসেছেন গুলিস্তান। অনেক দেখে শুনে তিনি ছেলে-মেয়ের জন্য দুটি কাপড় কিনেছেন ৪৫০ টাকা দিয়ে। শাহনাজ বেগম বলেন, এতদিন তেমন একটা শীত ছিল না। কয়েকদিন ধরে শীত অনুভব হওয়ায় বাচ্চাদের জন্য গরম কাপড় কিনতে এসেছি। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় কাপড়ের দাম অনেকটা কম। আলী হায়দার দম্পতি গ্রিনরোড থেকে এসেছেন সিটি কলেজের সামনের হকার্স মার্কেটে। উদ্দেশ্য পরিবারের সবার জন্য শীতবস্ত্র কিনবেন। আলী হায়দারও বলছেন একই কথা। শীতের তীব্রতা বাড়ায় এখন গরম কাপড় কিনতে হবে। এতদিন হালকা পাতলা কাপড় দিয়ে চললেও এখন গরম কাপড় ছাড়া চলা যাবে না। শুধু শাহনাজ বেগম আর আলী হায়দার নন। রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাথজুড়ে এখন হাজারও মানুষ ভিড় করছেন শীতবস্ত্র কেনার জন্য। ফুটপাথে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে শুরু করে কাপড় ভেদে ৪০০- ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। শুধু ফুটপাথ নয়, রাজধানীর বিপণী বিতানগুলোতেও শীতকে কেন্দ্র করে আয়োজনের কমতি নেই। বসুন্ধরা মার্কেট, আজিজ মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, ফরচুন মার্কেট, টুইন টাওয়ার, ইস্টার্ন প্লাজা, মাসকট প্লাজা, পলওয়েল মার্কেট সিটিহার্টসহ আরো বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরাও এসব মার্কেট থেকে শীতের কাপড় কিনছেন। পলওয়েল মার্কেটের খান গার্মেন্টসের সেলস ম্যানেজার মো. সুমন জানান, এই মার্কেটে বেশির ভাগ কাপড় পাইকারি বিক্রি হয়। সেপ্টেম্বর নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে শীতবস্ত্র দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা এসে পাইকারি নিয়ে যায়। শীত বাড়ার কারণে কদিন ধরেই খুচরা বিক্রিও অনেক বেড়েছে। এ সময়টা তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। শীতকে কেন্দ্র করে পলওয়েল মার্কেটে এসে বাহারি রঙের ডিজাইনের ছোট বড় ছেলে মেয়ে, পুরুষ মহিলা সবার জন্যই আলাদা আলাদা কালেকশন। সুমন জানান, আমরা ভারত, চায়না, ইন্দোনেশিয়া থেকে কালেকশন আনি। ছেলেদের জন্য কিংডম সোয়েটার প্রতিটি ১০০০ টাকা, প্রাসুট জ্যাকেট প্রতিটি ১০৫০ টাকা, জিসন জ্যাকেট ১৮০০ টাকা, ফরমাল ভারি গেঞ্জি ১০০০ টাকা, লেদার জ্যাকেট ২০০০ টাকা, ফরমাল জ্যাকেট ২৪০০ টাকা মেয়েদের ওভারকোট ৩০০০ টাকা ছেলেদের ব্লেজার ১৫০০ থেকে শুরু করে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। টার্গেট ফ্যাশনের সেলসম্যান সজিব বলেন, তারা বেশি বাচ্চাদের শীত আইটেম বিক্রি করেন। ছোটদের বিভিন্ন ডিজাইনের কোয়ালিটির সোয়েটার ৩৫০ থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকা। বড়দের সোয়েটার কার্ডিগান, ব্লেজার ৮০০-৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। বসুন্ধরা মার্কেট, সিটি হার্ট, ফরচুন, মাসকট প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাসসহ প্রায় সব মার্কেটেই শীতের পোশাকের ব্যবসা জমজমাট। এসব মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি শাল পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান, প্লাস পয়েন্ট, ইজি, ইয়েলো, রিচম্যানসহ সব ব্র্যান্ডই শীতের কালেকশন নিয়ে আসছে। তাছাড়া শীতকে সামনে রেখে বিভিন্ন জুতার দোকানগুলোতেও বিক্রি বেড়ে গেছে। ছোট বড় সবাই এখন পা বন্ধ জুতা মোজা কিনছেন। তবে ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা গত বছরের তুলনায় ব্যবসা কম হচ্ছে মনে করলেও অভিজাত মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা তুলনামূলক ভালো হচ্ছে বলে মনে করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.