মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমনপীড়নসহ দেশটিতে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার ঘটনা তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ।খবর এএফপির।
আগামী সোমবার থেকে শুরু হওয়া ১২ দিনের মিয়ানামার সফরকালে ইয়াংগি লি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবেন বলে শুক্রবার জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সফরকালে রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনার পাশাপাশি কাচিন রাজ্যও সফর করবেন তিনি। রাজ্যটিতে আদিবাসী বিদ্রোহী ও মিয়ানমার সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষকালে কয়েক হাজার বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে।
গত বছরের মার্চে নোবেল জয়ী অংসান সুচির নেতৃত্বাধীন দল মিয়ানমারে সরকার গঠনের পর দেশটিতে শান্তি বিরাজ করবে বলে ধারণা করা হলেও সেখানে আদিবাসী সংখ্যালঘু ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হয়ে উঠছে।
গত অক্টোবরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়িতে রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনায় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান শুরু করে। অভিযানকালে পুরো এলাকা অবরুদ্ধ করে ফেলে সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানকালে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে অর্ধালক্ষাধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তারা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হত্যা এবং নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত লি, অবরুদ্ধ অবস্থাকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর ধর্ষণ, হত্যা এবং নির্যাতনের ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
শুক্রবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে রাখাইনে যে পরিস্থিতি দেখা গেছে তাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই সেখানার মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, রাখাইনের ঘটনাপ্রবাহ ছাড়াও নতুন সরকার কাচিন এবং শান রাজ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে।
ইয়াংগি লি এর আগে মিয়ানমার সফরকালে রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের আচরণের সমালোচনা করেন। ওই সময় তাকে হুমকি দেয়ার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখায় সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা।
ওই সময় কট্টরপন্থী বৌদ্ধ ভিক্ষু ভিরাথু জাতিসংঘের বিশেষ দূতকে ‘আমাদের দেশের পতিতা’ বলে গালি দেন।
চলমান সেনা অভিযানে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালানো হলেও মিয়ানমার সরকার তা অস্বীকার করছে। তাদের দাবি নিরাপত্তা বাহিনী গত অক্টোবরে সীমান্ত চৌকিতে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের ধরতে বৈধভাবে অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমার সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ নাকচ করা হয়। এছাড়াও প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের জোর করে বিতাড়নের অভিযোগও অস্বীকার করা হয়।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাখাইনের অস্থিতিশীল এলাকার ‘বাঙালি’ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা, মসজিদ-মাদরাসার ভবনগুলো প্রমাণ করে সেখানে কোনও গণহত্যা বা ধর্মীয় নিপীড়নের ঘটনা ঘটেনি।
তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এ প্রতিবেদনকে পদ্ধতিগতভাবে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ এবং ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে আখ্যা দেয়।
প্রতিবেদনের ব্যাপারে সংস্থাটির মন্তব্য, পরিস্থিতিকে খারাপ নয় বলে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত টানার যে চিরাচরিত রীতি হয়েছে এ প্রতিবেদন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আন্তর্জাতিক নিরসনের উদ্দেশ্যেই প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
এদিকে সরকারি কমিশনের প্রতিবেদনে নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করা হলেও সম্প্রতি রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের ধরে পুলিশের পেটানো এবং লাথি দেয়ার একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় আটজন পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.