বাণিজ্য মেলার প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। জুমার নামাজের পর মেলা প্রাঙ্গণে মানুষের ঢল নামে। টিকিট কাউন্টারগুলোতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অনেককে সপরিবারে মেলায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর পা ফেলার জায়গা ছিল না মেলা প্রাঙ্গণে।
একসঙ্গে অনেক গাড়ি প্রবেশ করায় সৃষ্টি হয় তীব্র জটের। এ সময় গাড়ির চলাচল ঠিক রাখতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়।
এ দিন মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল ইলেকট্রনিক্স পণ্য। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স প্যাভিলিয়নে ক্রেতারা ভিড় জমান নতুন কী পণ্য এসেছে তা জানতে। বিশেষ করে ফ্রিজে আগ্রহ ছিল তাদের।
সরেজমিন দেখা গেছে, মেলার ভেতরে স্টলের বিক্রয়কর্মীদের সহযোগীরা হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পণ্যের গুণমান বোঝাতে দম ফেলার সময় পায়নি তারা। আকাঙ্খা অনুযায়ী বিক্রি হওয়ায় স্টল মালিকদের উচ্ছ্বসিত দেখা গেছে। আগামীর ছুটির দিনগুলোতে আরও বেশি বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন কেউ কেউ।
যমুনা ইলেকট্রনিক্স প্যাভিলিয়নের ডেপুটি ইনচার্জ নিয়াজ মোর্শেদ জানান, প্রথম শুক্রবার হওয়ায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। এদের বেশিরভাগই ফ্রিজ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে। এবারের মেলায় ১৭০ থেকে ৩৪৮ লিটার পর্যন্ত ৫০টি মডেলের ফ্রিজ আনা হয়েছে। এগুলোর রং ও গড়নে রয়েছে বৈচিত্র্য। মেলা উপলক্ষে যমুনা ইলেকট্রনিক্সের পক্ষ থেকে ক্রেতাদের আকর্ষণীয় গিফট ভাউচার ও ডিসকাউন্ট দেয়া হচ্ছে। ১ হাজার টাকার পণ্য কিনলে ১০০ টাকা গিফট ভাউচার দেয়া হচ্ছে, যা দিয়ে পরবর্তীতে ক্রেতারা যমুনা ফিউচার পার্কে কার্নিভাল ও ব্লক বাস্টার সিনেমাতে ছাড়ের সুবিধা পাবেন। ১০ হাজার টাকার পণ্য কিনলে ১ হাজার টাকার গিফট ভাউচার দেয়া হচ্ছে। এই ভাউচার দেখিয়ে মেলা চলাকালীন যমুনার পণ্য ক্রয়ে ছাড় পাবেন ক্রেতারা। এ ছাড়া পণ্যের মূল্যের ওপর আকর্ষণীয় ছাড় রয়েছে।
তিনি জানান, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি যমুনা ফ্রিজ ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। ১০ বছরের কম্প্রেসার গ্যারান্টি। রয়েছে অত্যাধুনিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল টেকনোলজি। এই প্রযুক্তির বিদেশী ফ্রিজ কিনতে লাখ টাকার ওপরে গুনতে হবে। উন্নতমানের কনডেনসার, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কম্প্রেসার, আল্ট্রা মাইক্রো ফোম ইনসুলেসন এবং আর৬০০এ গ্যাসের সুষম সমন্বয়ের ফলে ফ্রিজ দীর্ঘক্ষণ ঠাণ্ডা ধরে রাখতে পারে। সিলিকন ফ্রি তাই মরিচা ধরে না, রং পরিবর্তন হওয়ার ভয় নেই।
অন্যদিকে এতে খাবার বিষমুক্ত থাকে। বাজারে এ জাতীয় ফ্রিজ নেই। এ ছাড়া যমুনা ফ্রিজ সিএফসি ফ্রি এবং মাপে সঠিক। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল টেকনোলজি থাকায় খাবারে দুর্গন্ধ হয় না। আর সর্বোচ্চ বিক্রয়োত্তর সেবা তো রয়েছেই।
ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে ফ্রিজের কম্প্রেসার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে। কারণ কম্প্রেসারই ফ্রিজের মূল উপাদান, যা ফ্রিজকে দ্রুত ঠাণ্ডা করে। তারপর ফ্রিজ কতটুকু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, লিটারের মাপ ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। সিএফসি ফ্রি হলেও সঠিক গ্যাসের ব্যবহার না করার কারণে মানবদেহের ক্ষতি হতে পারে।
আমদানি করা বেশিরভাগ ফ্রিজ নিম্নমানের- এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এসব ফ্রিজে সিলিকন রয়েছে, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। দীর্ঘমেয়াদে নানা রোগব্যাধির সৃষ্ট করতে পারে। সিলিকনযুক্ত ফ্রিজে খাবার দুর্গন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া কম্প্রেসার উন্নতমানের না হওয়ায় অধিক বিদ্যুৎ লাগে। সিএফটির মাপেও গরমিল থাকে। অনেক অসাধু আমদানিকারক চীন থেকে অর্ডার দিয়ে ব্র্যান্ডের ফ্রিজের নকল আমদানি করছেন। ক্রেতারা আসল-নকলের পার্থক্য বুঝতে না পারায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
মিরপুর থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আল-আমিন বলেন, কর্মদিবসে অফিস শেষ করে মেলায় আসার শক্তি থাকে না। তা ছাড়া বাচ্চাদেরও স্কুল ও টিউশন ছুটি থাকে না। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘুরতে এসেছি। টুকটাক গৃহস্থালির সামগ্রী কিনেছি। মেলার শেষের দিকে এসে বাকি জিনিসপত্র কিনব।
মেলার গেট ইজারাদার মীর ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মীর শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রথম শুক্রবার হওয়ায় মেলায় প্রচুর লোকসমাগম হয়েছে। মাগরিবের আজান পর্যন্ত ৮০ হাজারের মতো ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় প্রবেশ করেছে। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে মীর ব্রাদার্সের পক্ষ থেকে ৭০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।