পুরস্কার বিতরণীর পর মাশরাফি বিন মুর্তজাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। দুই দলের খেলোয়াড়দের ভিড়ে একজনই নেই—মাশরাফি। অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যটুকু দিয়েই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের চিকিৎসকের সঙ্গে হাসপাতালে চলে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিজের বলে কোরি অ্যান্ডারসনের শট ঠেকাতে গিয়ে ডান হাতের বুড়ো আঙুলে চোট পেয়েছেন। হাসপাতালে যেতে হয়েছে তার এক্স-রে করাতেই। ক্রিকেট ঘিরে লাল-সবুজের উপস্থিতি মানেই উৎসব। সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন। নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী বাংলাদেশিরা কাল ধবলধোলাইয়ের দিনেও বে ওভালে সে উৎসবটা ধরে রাখলেন। সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতেও ২৭ রানে হার, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টিতেও ধবলধোলাই—এসব নিয়ে যেন কারও কিছুই যায় আসে না। অবশ্য প্রশান্ত মহাসাগরপারে কোরি অ্যান্ডারসনের ব্যাটে যে ঝড় উঠেছে, এরপর সান্ত্বনার জয়ের স্বপ্ন কেউ দেখেছে কি না সন্দেহ। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কলিন মানরো মাত্র তিন বল উইকেটে থাকলেন। তাতেও দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডের ছবি খুব একটা বদলায়নি অ্যান্ডারসনের ঝোড়ো ৯৪ রানের কারণেই। মানরোর সেঞ্চুরির পর নিউজিল্যান্ড করেছিল ১৯৫ রান, কাল কারও সেঞ্চুরি ছাড়াই ১৯৪। মাথার ওপর রানের বোঝা চেপে বসার পর যা হওয়ার তাই হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংসে। তবে শুরুতে কিছুটা আশা ছিল। দলের ৪৪ রানে তামিমের উইকেট হারিয়েও ৮.২ ওভারে ১ উইকেটে ৮২ রান। ১১.৪ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১১৩ রান। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এটা অসম্ভব কিছু নয়। অথচ হাতে ৪ উইকেট রেখেও বাংলাদেশ কিনা করতে পারল ১৬৭! সিনিয়রদের রানে ফেরা এ ম্যাচেও হয়নি। সাকিব আল হাসান ৩৪ বলে ৪১ করেছেন, কিন্তু ম্যাচ জেতানোর তাড়না দেখা যায়নি তাঁর ব্যাটিংয়ে। সাকিব উইকেটে আসেন ৮২ রানে ২ উইকেট পড়ার পর। ব্যাট হাতে তিনি আরেকটু আক্রমণাত্মক হলে সেখান থেকেও জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করা অসম্ভব ছিল না। বাংলাদেশের ইনিংসে আলোর রেখা হয়ে থেকেছে শুধু সৌম্য সরকারের ব্যাটিং। আগের ম্যাচের ৩৯-এর পর কাল তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে করেছেন ২৮ বলে ৪২। ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি করতে না পারলেও বাংলাদেশ আর বে ওভালকে মনে রাখার মতো ব্যাটিংই করেছেন বাঁহাতি কোরি অ্যান্ডারসন। মাত্র ৪১ বল খেলে টি-টোয়েন্টিতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৯৪ রান করে অপরাজিত। ৪১ রানে ৩ উইকেট পড়ার পরও তাই নিউজিল্যান্ডের ইনিংস দুই শ ছুঁই ছুঁই। টম ব্রুসের বিদায়ের পর উইকেটে এসে শুরুটা ধীরেই করেছিলেন। কিন্তু পরে এমন ঝড় তুললেন যে, প্রথম ১০ ওভারে ৩ উইকেটে মাত্র ৫৫ রান করার ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছেন শেষ ১০ ওভারে ১৩৯ রান তুলে। এর মধ্যে অ্যান্ডারসনেরই ৮৮। ১১তম বলে মোসাদ্দেককে মিড অফ দিয়ে চার মেরে শুরু। পরের ওভারে মাশরাফিকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা। ইমরুল কায়েস ক্যাচের জন্য উল্টো দিকে দৌড়ে হুড়মুড়িয়ে পড়লেন বিজ্ঞাপন বোর্ডের ওপারে। চোট গুরুতর না হলেও হাঁটুতে পাওয়া ব্যথাটা মাঠ ছাড়তে বাধ্য করল তাঁকে। ব্যাটিংয়েও হতে পারেননি তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী। ১০ ছক্কার মধ্যে অ্যান্ডারসন মাশরাফির বলে মেরেছেন আরও দুটি। সৌম্য সরকার তো এক ওভারে পরপর তিন ছক্কা খেয়ে আর বলই পেলেন না। তাসকিন, রুবেল, মোসাদ্দেক—কাকে মারেননি অ্যান্ডারসন! ব্যতিক্রম শুধু সাকিব। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়েছেন এবং সেটা অ্যান্ডারসনের হাতে কোনো চার-ছক্কা খাওয়া ছাড়া। মাশরাফিকে তো শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরেই পাঠিয়ে দিলেন অ্যান্ডারসন। নিজের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলটা ফুলটস করেছিলেন। অ্যান্ডারসনের ব্যাট হয়ে বল তীব্র গতিতে আসার সময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মাশরাফি। বলের আঘাতে ব্যথা পেয়ে ওভার অসমাপ্ত রেখেই ছাড়তে হয় মাঠ। তার আগে অবশ্য কেন উইলিয়ামসনকে দুবার আউটের সুযোগ তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাকিব ও তামিমের ক্যাচ মিসে বেঁচে গেছেন দুবারই। তামিম তো ক্যাচ ফেলে দিয়ে হাতেও ব্যথা পেলেন। ৬০ রানে পরে রুবেলের বলে বোল্ড হলেও চতুর্থ উইকেটে ১২৪ রানের জুটি গড়ে অ্যান্ডারসনকে সবচেয়ে বড় সমর্থনটা দিয়ে গেছেন উইলিয়ামসনই। পার্থক্যটা এখানেই। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে না ছিলেন কোনো অ্যান্ডারসন, না কোনো উইলিয়ামসন। ব্যাটিং-স্বর্গেও তাই ‘ইশ্! এবারও পারলাম না…’ হতাশা দিয়েই শেষ হলো টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.