মোস্তাফিজুর রহমান কি এবারের আইপিএলে খেলবেন? কাল ধানমন্ডিতে নিজের অফিসে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের হঠাৎই ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নটা উঠল। আইপিএল শুরু হতে সেই এপ্রিল। এখনো দেরি প্রায় তিন মাস। তার আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট, ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফর আছে বাংলাদেশের। তা এখনই কেন মোস্তাফিজের আইপিএল খেলার প্রসঙ্গ উঠছে? উঠছে, কারণ অবশ্যই চোট। গত বছর প্রথমবারের মতো আইপিএল খেলতে গিয়েই সাড়া ফেলে দেন মোস্তাফিজ। চ্যাম্পিয়নই হয় তাঁর দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। কিন্তু দলের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখে দেশে ফেরেন হ্যামস্ট্রিং ও অ্যাঙ্কেলের চোট নিয়ে। আর এই চোটের ধকল সামলে উঠতে অনেকটা সময় লেগে যায় তাঁর। আইপিএল মাতিয়ে আসা ‘ফিজ’কে এবারও ছাড়েনি চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ। চোটের শঙ্কাই প্রশ্নটা তুলছে, এবারও কি ভারতের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট খেলতে যাবেন মোস্তাফিজ? নাজমুল হাসান যা বললেন তাতে পরিষ্কার বাঁহাতি এই পেসারকে বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলতে দেওয়া নিয়ে এবার বিসিবি যথেষ্ট সতর্ক, ‘গতবার সে আইপিএলের “সেরা উদীয়মান” খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছে। পারিশ্রমিকের অঙ্কটাও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তবে একটা কথা বলতে পারি, যদি শতভাগ ফিট না থাকে, আমরা তাকে খেলতে দেব না।’ প্রায় পুরো ২০১৬ সালটাই মোস্তাফিজের কেটেছে চোটের সঙ্গে লড়াই করে। জানুয়ারিতে খুলনায় জিম্বাবুয়ে সিরিজে চোট পান বাঁ কাঁধে। সেটি কাটিয়ে মার্চে এশিয়া কাপে ফিরতেই আবার নতুন চোটের হানা। এবার চোট ডান পাঁজরে। মে মাসে আইপিএল থেকে ফেরেন জোড়া চোট নিয়ে। তবে তাঁকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে জুলাইয়ে সাসেক্সের হয়ে ইংল্যান্ডে খেলতে গিয়ে পাওয়া বাঁ কাঁধের চোট। চোট সারিয়ে তুলতে যেতে হয়েছে শল্যবিদের ছুরির নিচে। চিকিৎসা, পুনর্বাসন—প্রায় পাঁচ মাসের লম্বা বিরতির পর দলে ফিরেছেন বছরের একেবারে শেষ দিকে। কিন্তু তাতেও কি স্বস্তি মিলছে মোস্তাফিজের? বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে খেলেও চোট থেকে মুক্তি মেলেনি। কিউইদের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিকে তো নিজেই ‘না’ করে দেন। উদ্বেগটা হচ্ছে, আবারও চোটে পড়েছেন ২১ বছর বয়সী পেসার। নতুন চোটটা কোমরে। মন-শরীর সায় দিচ্ছে না বলে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর দেশেই চলে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে নিউজিল্যান্ডে রেখে দিয়েছে। বিসিবি সভাপতি কাল বললেন, পুনর্বাসনের জন্যই তাঁকে দলের সঙ্গে রেখে দেওয়া হয়েছে, ‘শেষ টি-টোয়েন্টিও তার খেলার কথা ছিল। যখন শুনি সে খেলবে না চিন্তিত হয়ে পড়ি। বায়েজিদের (বিসিবির ফিজিও) সঙ্গে তার যোগাযোগ ভালো। বায়েজিদের সঙ্গে ওকে কথা বলিয়ে দিয়ে জানতে পারি, আসলেই ওর সমস্যা আছে। তবে অস্ত্রোপচার যেখানে হয়েছে সেখানে কোনো সমস্যা নেই। এখন ব্যথা হচ্ছে কোমরে। ওকে তাই খেলানোর ঝুঁকি নিতে চাইনি। মোস্তাফিজ দেশে চলে আসতে চেয়েছিল। এখন এসে কী করবে সে? বরং সুস্থ হয়েই আসুক।’ ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পা রেখে মোস্তাফিজ শুধুই বিস্ময় উপহার দিয়ে গেছেন। ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই জাদুকরি বোলিং করেছেন। মোস্তাফিজ সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন বারবার, আলোচনায় তিনি এখনো। তবে যতটা না তাঁর পারফরম্যান্স, র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি কিংবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্তিতে, তার চেয়ে বেশি চোটের শঙ্কা নিয়ে। ফিজিও বায়েজিদ অবশ্য বলছেন, ‘এবারের চোট মারাত্মক কিছু নয়। তবে কী কারণে ব্যথা হচ্ছে, তাকে না দেখলে বলতে পারছি না।’ চোট কতটা গুরুতর, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোস্তাফিজ বারবার কেন চোটে পড়ছেন? পেসারদের চোটে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু কদিন পরপর কেন নতুন নতুন চোট বাধাগ্রস্ত করছে মোস্তাফিজের অগ্রযাত্রা? মাশরাফি বিন মুর্তজার মতো আরেকটি বিয়োগান্ত গল্প তৈরি হওয়ার আগেই উত্তরগুলো খুঁজে বের করা জরুরি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.