আইএস-এর মোস্ট ওয়ান্টেড সদস্যদের মধ্যে একজন ইয়াহিয়া আবু হাসান। বৃটেনে উগ্রপন্থায় ঝুঁকে পড়েন তিনি। বিয়ে করেন লন্ডনে জন্ম নেয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক নারীকে। তার নাম জয়া চৌধুরী। সম্প্রতি এ তথ্য সামনে এসেছে। এ নিয়ে প্রতিবেদন এসেছে বৃটেনের টাইমস, ডেইলি মেইল, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে। এতে উঠে এসেছে জয়া চৌধুরীর উগ্রপন্থায় ঝুঁকে পড়া, আইএস নেতাকে বিয়ে করা এবং পরে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার ঘটনা প্রবাহ। খবরে বলা হয়, জয়া চৌধুরী আইএস’র প্রোপাগান্ডা প্রধানকে ডিভোর্স দিয়ে ইউকেতে ফিরে আসেন। এর আগে ২০ বছর বয়সে ইয়াহিয়া আবু হাসানকে বিয়ে করে তার সঙ্গে সিরিয়ায় পাড়ি জমান জয়া। আবু হাসানের জন্মগত নাম জন জর্জেলাস। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মার্কিন-গ্রিক পিতামাতার উচ্চমধ্যবিত্ত এক পরিবারে তার জন্ম। দ্য আটলান্টিকের সাংবাদিক গ্রায়েম উডের তথ্যমতে, ২০০৩ সালে একটি মুসলিম ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে তার পরিচয় হয় জয়ার সঙ্গে। তরুণী জয়া ছিল জর্জেলাসের মতোই বিদ্রোহীসুলভ। ২০০১ সালে ইসলাম গ্রহণ করে টেক্সাসে নিজের মিলিটারি পরিবারকে পরিত্যাগ করে জর্জেলাস। অন্যদিকে, জয়া চৌধুরীর জন্ম বাংলাদেশি এক অভিবাসী পিতার পরিবারে। তিনি একজন পোস্টমাস্টার হিসেবে কাজ করতেন। পরিবারে তানিয়া নামে পরিচিত জয়া। তার বেড়ে ওঠা পুরোপুরি পশ্চিমা ধাঁচে। ধর্মে কোনো আগ্রহ ছিল না। জয়ার পিতা-মাতা ও চার ভাইবোন ধর্মীয় চর্চায় অতটা নিবেদিত ছিলেন না। তারা বৃটিশ মধ্যবিত্ত সংস্কৃতিতে মিশে যান। পূর্ব লন্ডনে এ লেভেল পড়ার সময় জয়া উগ্রপন্থায় ঝুঁকে পড়েন। অনলাইনে পরিচয় হওয়ার পর ২০০৩ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে রোশডেলে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন। টাইমসের প্রতিবেদন মোতাবেক, সে সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন জয়া। এক বছরের মধ্যে এই দম্পতি জর্ডানিয়ান আবু ঈসা আল রিফাই-এর মতো উগ্রপন্থি প্রচারকদের সান্নিধ্যে চলে যান। লন্ডন ছেড়ে টেক্সাসে যাওয়ার পর আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইট হ্যাক করার জন্য জর্জেলাসের ৩৪ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। জয়া স্বামীর পাশ ছেড়ে যাননি। জর্জেলাসের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। ২০১১ সালে জর্জেলাসের প্যারোলের সময় উত্তীর্ণ হয়ে যায়। এরপর ওই দম্পতি নিজেদের দুই পুত্রসন্তানকে নিয়ে মিশরে চলে যান। এর কিছুদিন পরই নিজেদের তৃতীয় সন্তান জন্ম দেন জয়া। সেখানেই ইউরোপীয় ইসলামপন্থিদের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। একজন স্কলার হিসেবে সুনাম অর্জন করেন জর্জেলাস। মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হওয়ার পর ওই দম্পতি তুরস্কে চলে যান। বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে ইঙ্গিত মেলে জয়াকে তার স্বামী যখন বলেছিলেন তারা একটি ট্রিপে যাচ্ছেন তখন তিনি সফরের গন্তব্য নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না। ওই গন্তব্য ছিল সিরিয়া। জয়া আনুমানিক ৮০০ বৃটিশের একজন যারা সিরিয়ায় উগ্রপন্থি গ্রুপটিতে যোগ দিয়েছে। এদের মধ্যে আনুমানিক ১০০ জন নারী। যাহোক, এরপর জর্জেলাসের সঙ্গে সংসার বেশিদিন টেকেনি জয়ার। টাইমসের খবর অনুযায়ী, ২০১৩ সালে জর্জেলাসকে ছেড়ে চলে যান জয়া। তখন চতুর্থ সন্তানসম্ভবা ছিলেন তিনি। প্রথমে লন্ডনে ফেরেন। পরে নিজের মা ও শ্বশুরের সঙ্গে থাকার জন্য চলে যান ডালাসে। এখন নিজের চার সন্তানের দেখভাল করে সময় কাটাচ্ছেন জয়া। জর্জেলাসকে তিনি ডিভোর্স দেন ২০১৪ সালে। নিজের টুইটার প্রোফাইলে এখন নিজেকে ‘বামপন্থি উদারনীতিপন্থি ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান সন্ধানী’ বলে উল্লেখ করেছেন জয়া। ওদিকে, জর্জেলাস, আইএস’র অন্যতম সিনিয়র পশ্চিমা সদস্য।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.