অদ্ভুদ ব্যাপার, উখিয়া বনবিভাগের জায়গায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও বর্বরতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা বস্তিতে মাটির পজিশন কিনেই থাকছেন, তাও আবার ঝুপড়ি ঘরে। অব্যাহতভাবে রোহিঙ্গাদের কুতুপালং বস্তিতে আসার সুযোগে একশ্রেণির প্রভাবশালী মহল স্থানীয় বনবিভাগকে ম্যানেজ করে অনুপ্রবেশ করে আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে মাটির পজিশন বিক্রি করেই হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। শুধু পজিশন বিত্রিু নয়, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগে মাসিক চুক্তিভিক্তিক ভাড়াও আদায় করছে মহলটি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের পাশাপাশি কয়েকটি পুরাতন রোহিঙ্গা সিন্ডিকেট তাই এখন নিত্যনতুন বসতি গড়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। কেউ কেউ বনবিভাগের জায়গায় নিজ উদ্যোগে লম্বা ভাড়া বাসা নির্মাণ করে তা রোহিঙ্গাদের মাঝে ভাড়া দিচ্ছেন। সূত্র জানায়, সীমান্তরক্ষায় নিয়োজিত বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির কড়া নজরদারি থাকার পরও রাতের আঁধারে রোহিঙ্গারা দলে দলে অনুপ্রবেশ করছে সপরিবারে। স্থানীয় দালালরা টাকার বিনিময়ে এসব রোহিঙ্গাকে পৌঁছে দিচ্ছে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে। প্রতি রাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকলেও তাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। ফলে এসব রোহিঙ্গা রাতযাপনের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীসহ রোহিঙ্গা নেতা ও মাঝিদের কাছ মাটির পজিশন কিনে তৈরি করছে নতুন নতুন ঝুঁপড়ি ঘর। তাও আবার উখিয়া বনবিভাগের জায়গা। হঠাৎ আসা রোহিঙ্গারাও অসহায় অবস্থায় প্রভাবশালী ও নেতাদের কথামতো পজিশন ও মাসিক চুক্তির কথায় রাজি হয়ে যাচ্ছে। গত শনিবার সকালে সরজমিন উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে বস্তির আশেপাশে বনবিভাগের জায়গায় ছোট ছোট পজিশন কিনে তাতে ঝুঁপড়ি ঘর বানাচ্ছেন বেশকিছু রোহিঙ্গা। জানতে চাইলে গত সপ্তাহে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে আসা মিয়ানমারের খেয়ারীপাড়া গ্রামের ফজল আহামদ (৪৮) জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী ছেলেমেয়েসহ ৭ জন এসেছেন। উঠেছেন বস্তির এক আত্মীয়ের ঘরে। গত ৩ দিন আগে স্থানীয় প্রভাবশালী ফরিদ ড্রাইভারের কাছ তিনি ২ হাজার টাকায় মাঠির পজিশনটি কিনেছেন। এখন সে জায়গায় কোনোভাবে থাকার জন্য ঝুপড়ি ঘর তৈরি করছি। ঝুপড়ি তৈরির পর মাসিক এক হাজার টাকা করে দিতে হবে ফরিদ ড্রাইভারকে। এমএসএফ হাসপাতালে একটু সামনে রোহিঙ্গা বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, পলিথিনের ঘেরাবেড়া ও ছাউনি নিয়ে ১৫-২০টি নতুন ঝুপড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। মিয়ানমারের খেয়ারীপাড়া গ্রাম থেকে আসা আজমল খান ও নুরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, স্থানীয় জাহাঙ্গীর ও ছৈয়দ নুরের কাছ থেকে তারা মাটির পজিশনগুলো কিনে সেখানে ঝুপড়ি নির্মাণ করছে। মংডু নাইছংপাড়ার জাফর আলম (৪০) জানায়, সে স্থানীয় সিরাজ সওদাগরের নিকট থেকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঝুপড়ি বাঁধার জায়গা নিয়েছেন। ক্যাম্পের বাজার থেকে পলিথিন, বাঁশ ক্রয় করে একটি ঝুপড়িঘর নির্মাণ করেছি। এভাবে আরো বেশ কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নাগরিক নতুন করে ঝুপড়ি নির্মাণের কথা জানালেন। মাসিক চুক্তির কথাও জানালেন। অনেকে এ সুযোগে বনবিভাগকে ম্যানেজ করে বনবিভাগের জায়গায় লম্বা ভাড়া ঘর নির্মাণ করে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এসব কারণে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই প্রভাবশালী ও রোহিঙ্গা মাঝিদের নিকট জিম্মি অবস্থায় দিনানিপাত করছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ যুবতী ও মহিলাদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকার চেয়ে শর্তেও মাধ্যমে পজিশন ও চুক্তির মাধ্যমে থাকায় শ্রেয় মনে করছেন। বনবিভাগের জায়গায় রোহিঙ্গাদের কাছে প্রভাবশালীদের পজিশন বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, এমনতো হওয়ার কথা নয়, বনবিভাগের জায়গা পজিশন হিসেবে বিক্রি বেআইনি, এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেন এই কর্মকর্তা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.