নাটোরের লালপুরে ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত কলেজ শিক্ষক মোশারফ হোসেনের লাশের ময়নাতদন্ত ও নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে সরজমিন জানা যায়, ছিনতাইকারীদের চিনে ফেলায় তারা তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ময়নাতদন্ত শেষে নাটোর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ জানান, নিহত মোশারফ হোসেনের ময়নাতদন্ত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সম্পন্ন হয়েছে। একটি গুলি নিহতের বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে ভিতরে ছিল। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক গুলিটি বের করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তিনি জানান, গুলির কারণে অত্যধিক রক্তক্ষরণে মোশারফের মৃত্যু হয়েছে। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ওবায়েদ জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোশারফ হোসেনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। বর্তমানে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। মামলা দায়েরের পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ্রামবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা তিনটায় মোশারফ হোসেনের নামাজে জানাজা পীরগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান জিন্নত আলী, ভাইস চেয়ারম্যান শফিউর রহমান, আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার হোসেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উজ জামান লাবলু, বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলিম আহমেদ, বাঘা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমানসহ হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে মোশারফ হোসেনকে নিজ গ্রামেই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। নিহত মোশারফের ভাই তুহিন জানান, মোশারফের স্ত্রী রিমা খাতুন পীরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের সাড়ে ৫ বছরের একটি ছেলে (অর্ক) ও দেড় বছরের মেয়ে (অবন্তি) রয়েছে। তিনি বলেন, দুই শিশু এখনো জানে না তারা বাবাহারা হয়েছে। অপরদিকে মোশারফের মৃত্যুতে স্ত্রী রিমা খাতুন বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বারবার বলছেন, তোমারা আমার স্বামীকে এনে দাও। আমি এতিম দুটো ছেলেমেয়েকে নিয়ে কিভাবে থাকবো। তুহিন এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, তার ভাইয়ের সঙ্গে কারো বিরোধ ছিল না। অথচ তাকে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ দিতে হলো। তুহিন জানান, ভাইয়ের লাশের ময়নাতদন্ত ও জানাজা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তারা এখনো মামলা দায়ের করতে পারেনি। তবে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বাঘার বাউসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান বলেন, যেখানে মোশারফকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মোশারফের স্ত্রী রিমা খাতুন বিচার দাবি করে বলেন, তার স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না। স্বামী সন্তান নিয়ে তিনি বাবার বাড়িতে বসবাস করেন। বাঘা থানার ওসি আলিম আহমেদ জানান, মোশারফ হত্যাকাণ্ডের স্থান লালপুরে হওয়ায় তার লাশ বাঘা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থেকে বৃহস্পতিবার বিকালেই নাটোর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। অকুস্থল লালপুর থানায় হওয়ায় মামলাটি লালপুর থানাতেই করতে হবে। লালপুর থানার ওসি আবু ওবায়েদ জানান, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়, বাধা দেয়ায় ছনতাইকারীরাই তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। পুলিশ ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লালপুর উপজেলার মোহরকয়া ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মোশারফ হোসেন নিজ বাড়ি রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার পীরগাছা গ্রামে ফিরছিলেন। পথে বাদলিবাড়ি পুলিশ বক্সের অদূরে ছিনতাইকারীরা তার মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। মোশারফ বাধা দিলে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর এক ট্রাকচালকের সহায়তায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাঘা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.