শনিবার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ সমিতি ‘আগামী দিনের অর্থনীতি : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সেমিনারের আয়োজন করেছিল। সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা দেশে বিনিয়োগ না বাড়ার কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, দেশে বিনিয়োগ না বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ হার। এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোর অভাব এবং আর্থিক খাতে সীমাহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকেও তারা বিনিয়োগ না বাড়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। জাতীয় আয় স্বাধীনতার অব্যবহিত পর যা ছিল, অকল্পনীয়ভাবে তা বেড়েছে, প্রায় ১৭৪ গুণ। জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে বটে, তা সত্ত্বেও মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ গুণ। এই যে অগ্রগতি, এটাকে আরও বেগবান করা সম্ভব। এজন্য যেসব পূর্বশর্ত প্রয়োজন, সেগুলোর অন্যতম হল বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিবেশ সৃষ্টি করা। সেমিনারের বক্তাদের মুখ থেকে বেশ কিছু পরামর্শ পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তাদের তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকারি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে মোট বিনিয়োগের এক-পঞ্চমাংশ। তবে এটা ঠিক, এই বিনিয়োগ অবকাঠামো সৃষ্টি করে, তাতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের পথ সুগম হয়। ফলে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ালে বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়ার কথা। তা যে হচ্ছে না, তার কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, ব্যাংক ঋণ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত জটিলতা ও সুদের উচ্চ হারই বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করছে। ঋণের সুদের হার কমানোর দাবি অতি পুরনো। ব্যবসায়ী মহল ও অর্থনীতির বিশ্লেষকরা এ দাবি জানিয়ে আসছে অনেকদিন ধরেই। ঋণের উচ্চ সুদের হার ছাড়াও আর্থিক খাতের দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব এবং দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি ইত্যাদিও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছে। ফলে বিশেষত ব্যাংকিং সেক্টরে সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে আর্থিক খাতের যাবতীয় দুর্নীতি-অনিয়ম ও অর্থ পাচার রোধ করাও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আরেক বড় শর্ত। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানোও জরুরি।
শনিবারের সেমিনারে আরও একটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তা হল, ব্যাংকগুলোর শক্তিশালীকরণ। বেসরকারি বিনিয়োগ যেহেতু মূলত ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল, তাই দেশের ব্যাংকগুলোর সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে থাকে বিনিয়োগের পরিমাণ। দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ তেমন একটা থাকে না। এসব ব্যাংকের কার্যক্রমের প্রশ্নে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বৈত ক্ষমতা লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়ে, কখনও কখনও বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়। সেমিনারের বক্তাদের মতো আমরাও মনে করি, ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সেগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা থাকা উচিত।
দেশের অর্থনীতিতে বর্তমান যে সাফল্য, তা আরও সম্প্রসারিত করতে হলে আলোচ্য সেমিনারের পরামর্শগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে- এটাই প্রত্যাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.