হোটেল লবিতে অন্তত সাত-আটজন খেলোয়াড়। এত খেলোয়াড় একসঙ্গে হলে সাধারণত একটু কোলাহল থাকে। কিন্তু কালকের সন্ধ্যাটা যেন ব্যতিক্রম। কারও মুখে কথা নেই। একজন আরেকজনের কাছ থেকে যেন মুখ লুকাতে চাইছেন!
টেস্ট শেষে বেসিন রিজার্ভের সংবাদ সম্মেলনে দারুণ একটা কথা বলেছেন তামিম ইকবাল, ‘সার্বিকভাবে এই টেস্ট ম্যাচ আমাদের জন্য মিশ্র অনুভূতির।’ বাংলাদেশ টেস্টটা ভালো খেলেছে, আবার খারাপও খেলেছে। বাংলাদেশ নিজেদের ভুলে হেরেছে, আবার ভাগ্যের কাছেও। কোনটা যে ঠিক, সেটাই প্রশ্ন। অনেকটা অর্ধেক খালি আর অর্ধেক ভরা গ্লাসের মতো। খেলোয়াড়দের চোখে-মুখেও সিদ্ধান্তহীনতা—টেস্টটা ভালো খেললাম, না খারাপ?
প্রথমত, টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৫৯৫ করবে, এটা স্বপ্নেও কেউ ভাবেনি। আবার স্বপ্ন যখন বাস্তবতাকেও হার মানিয়ে দিল, তখন এটাও কেউ ভাবেনি যে, এই টেস্ট বাংলাদেশ হারবে। ওয়েলিংটনে জিতলে বাংলাদেশ যতটুকু আনন্দ করত, ঠিক ততটাই ‘শোকের ছায়া’ এখন দলের মধ্যে। এটা অবশ্য টিম মিটিং বা টিম বাস থেকে পাওয়া খবর নয়। কাছ থেকে খেলোয়াড়দের দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলা।
সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিমের কাছেও জানতে চাওয়া হয়েছিল, আকাশে উঠতে উঠতে পাতালপুরীতে নিমজ্জিত হওয়ার পর দলের অবস্থা কী? আসলে প্রশ্নটাই কেমন! এ রকম একটা হারের পর সবার মন খারাপ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। তামিম অবশ্য সাগর সেঁচে মুক্তা তুলে আনলেন, ‘এই টেস্টে ইতিবাচক অনেক কিছুই আছে। নিউজিল্যান্ডে এসে একটা তরুণ দল নিয়ে তাদের বিপক্ষে এভাবে লড়াই করাটাই তো অর্জন। এই টেস্টে আমাদের নেতিবাচক ব্যাপার খুব কম। ইতিবাচকই বেশি।’
তামিমের কথার সঙ্গে একমত না হয়ে উপায় নেই। টেস্টের পাঁচ দিনের মধ্যে চারটি দিনই বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে ছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু শেষ দেড় দিনে যতসব নেতিবাচক ঘটনা ঘটল, সেগুলো যে ঢেকে দিয়েছে আগের সব অর্জনকেই! বিশেষ করে তামিম ও সাকিবের বাজে শট খেলে আউট হওয়াই বেশি ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। সাকিবের আউট নিয়ে তামিম একটা ব্যাখ্যা দিয়েও শেষ পর্যন্ত বলেছেন, ‘এই প্রশ্নের উত্তর সাকিবই ভালো দিতে পারত।’ শুনুন তামিমের ব্যাখ্যাটাও, ‘আমরা জানতাম, পুরো দিন টিকে থাকতে হলে স্বাভাবিক খেলা খেলতে হবে। খুব রক্ষণাত্মক হতে পারব না, আবার খুব আক্রমণাত্মকও হওয়া যাবে না। সাকিব বাঁহাতি স্পিনারের বলে আউট হয়েছে এবং সে নিজেও বাঁহাতি। সাকিব যদি আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলটি মারতে চেয়ে থাকে, তাহলে সে ঠিকই করেছিল। বলটা ঠিকমতো লাগেনি বলেই এত কথা হচ্ছে।’
আর তামিমের নিজের আউট? প্রথমে ওই সময়ে ওই শট খেলায় ভুলটা যেন তাঁর চোখে পড়ছিল না। তবে একটু পরই তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে, ‘আমি নিজে যে শটে আউট হয়েছি, সেটা আরও ভালোভাবে খেলা যেত। এসব ছোটখাটো ভুলের খেসারত দিয়েই তো আমরা ম্যাচটা হারলাম।’ ওয়েলিংটন টেস্টের হারকে এরপর আর দুর্ভাগ্য বলার সুযোগ থাকে না। তামিমও সেটাই বললেন, ‘আমরা শুধু আমাদেরই দোষারোপ করতে পারি। আমাদের দুজন খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক, আমরা মোটেও ভালো ব্যাট করতে পারিনি। আমরা দুর্ভাগ্যের শিকার যেমন হয়েছি, ঠিক তেমনি আমাদের ব্যাটসম্যানরা শট নির্বাচনেও অনেক ভুল করেছে।’
ক্রাইস্টচার্চের দ্বিতীয় টেস্টে এসব ভুল শোধরাতে পারলে ভালো। নইলে দেশে ফেরার ফ্লাইটে আর মিশ্র অনুভূতি থাকবে না। থাকবে কেবলই হতাশা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.