ব্যাংকিং খাতে পরিচালকদের লুটপাট থামছে না। প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেই পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনিয়মের পাহাড় জমেছে। তবে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি একটু কড়া হওয়ায় এখন এক ব্যাংকের পরিচালক অপর ব্যাংক থেকে ভিন্ন কৌশলে ঋণ নিচ্ছেন। এ যেন অনেকটা মিলেমিশে লুটপাট। বিশেষ করে পরিচালকরা ভাগাভাগি করে যে ঋণ নিচ্ছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা আর ফেরত আসছে না। ফলে বাড়ছে মন্দ ঋণের পরিমাণ। বর্তমানে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এছাড়া মোট ৬ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকাই নিয়েছেন ব্যাংক পরিচালকরা, যা মোট ঋণের প্রায় ১৪ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। কেউ বলছেন, ঋণ যেভাবে এককেন্দ্রিক হচ্ছে, তাতে আলামত খারাপ। অপরদিকে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর পরিচালকদের বেআইনি ও অনৈতিক চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ব্যাংকিং খাতের সার্বিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা। পরিচালকদের বেপরোয়া চাপে ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি, অনিয়মের পরিমাণ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি এ কথা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দেশে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। এজন্য অনেকটা বেপরোয়াভাবেই বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা নেয়ার হিড়িক পড়েছে। নিয়োগেও চলছে নজিরবিহীন দুর্নীতি।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি ব্যাংকেই এখন বেনামি ঋণের ছড়াছড়ি। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি বড় প্রভাবশালী গ্রুপের কাছে ব্যাংকিং খাত জিম্মি। তাদের কাছেই মোট খেলাপির বড় অংশ আটকা পড়ে আছে। তারাই নামে-বেনামে এসব ব্যাংকের মালিক। এমনও কথা প্রচলন আছে যে, এসব বড় ঋণ গ্রহীতার সর্দি-কাশি হলে ব্যাংকিং খাত প্রচণ্ড জ্বরে ভোগে। তাদের মতে, কোনো কারণে এসব গ্রুপে ধাক্কা লাগলে, পুরো ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন-পুরনো মিলিয়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি ৫৭টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৬টিই ব্যাংক পরিচালকদের হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯টি ব্যাংকের পরিচালক নিজের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন প্রায় ৪শ’ কোটি টাকার বেশি। একইভাবে ৯টি ব্যাংকের পরিচালক গ্যারান্টার বা জিম্মাদার হয়ে ঋণ দিয়েছেন আরও ২৩১ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ব্যাংকগুলোর খেলাপিদের ঋণের একটি বড় অংশই বর্তমান ও সাবেক ব্যাংক পরিচালক, তাদের স্ত্রী-পুত্র-সন্তান বা তাদের নিকটাত্মীয়দের কাছে আটকা পড়ে আছে। এসব ঋণ প্রস্তাব, অনুমোদন ও বিতরণের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালকের সংখ্যা এক হাজারের কাছাকাছি হলেও এ ধরনের সমঝোতাভিত্তিক বড় অংকের ঋণ বিনিময় করেন শতাধিক পরিচালক। যাদের কয়েকজন বেশি বিতর্কিত। মূলত এদের কাছেই পুরো ব্যাংকিং সেক্টর জিম্মি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র স্বীকার করেছে, আগে নিজ ব্যাংক থেকেই পরিচালকরা বেশি ঋণ নিতেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে তাদের মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিতে পারছেন না। তবে তাদের অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে কোনো বাধা নেই। ফলে পরিচালকরা এখন পরস্পরের যোগসাজশে একে অন্যের ব্যাংক থেকে যেমন ঋণ নিচ্ছেন, তেমনি প্রভাব খাটিয়ে নানা সুবিধাও নিচ্ছেন।
গত কয়েক বছরে ব্যাংকগুলোতে পরিচালকদের হস্তক্ষেপে বেশ কিছু আলোচিত জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কতিপয় পরিচালকের স্বার্থসংশ্লিষ্টতায় সোনালী ব্যাংকে ঘটেছে হলমার্ক কেলেংকারি। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর সরাসরি যোগসাজশে হয়েছে নজিরবিহীন লুটপাট। কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালকদের সংশ্লিষ্টতায় ঘটেছে বিসমিল্লাহ গ্রুপের জালিয়াতি।
পরিচালকদের হস্তক্ষেপে গত বছর অগ্রণী ব্যাংকের সিএসআরের টাকা নিয়ে নয়ছয় হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোতে পরিচালকদের বিপুল অংকের বেনামি ঋণের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালকরা প্রভাব খাটিয়ে জামানতের সম্পদ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে কয়েকগুণ বেশি দেখিয়ে শত শত কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, আসলে ব্যাংকের ঋণ গিলে খাচ্ছেন ব্যাংকের মালিকপক্ষ তথা কিছু পরিচালক। যাদের নিজেদের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ব্যবসা আছে। অনেকে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গেও জড়িত। তাদের কাছে ব্যাংক কোনো সেবামূলক লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়, এটিকে তারা ধরে নিয়েছেন উল্টো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মেশিন হিসেবে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্যাংকে তার আমানত রাখবে, আর সে টাকা নিজেরা ভাগাভাগি করে নেবেন। আবার নিজেরা ঋণখেলাপি হয়ে তা এক পর্যায়ে অবলোপনও করবেন।
এসব কারণে কয়েকটি ব্যাংকের ভেতরের অবস্থা খুবই নাজুক। তাদের আশংকা, এক সময় ভেতরের খোলস বেরিয়ে এলে বহু আমানতকারীকে পথে বসতে হবে। আর ব্যাংকের পরিচালক হয়েও যারা ঋণ নিচ্ছেন তাদের কোনো চিন্তা নেই। পরিস্থিতি খারাপ দেখলে সপরিবারে বিদেশে সটকে পড়বেন। ভবিষ্যতে এমন আশংকার কথা মাথায় রেখে তাদের প্রত্যেকে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে গেছেন। সেখানে তারা জমি, বাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা থেকে শুরু করে নানা ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করছেন। এজন্য দেশ থেকে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক পরিচালকদের যোগসাজশের মাধ্যমে ঋণ নেয়া অনৈতিক। এখানে অশুভ ইঙ্গিত রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে এ ধরনের ‘কানেক্টিং লেনদেন’ বন্ধ করা উচিত। তা না হলে খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে, যা ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দেবে।
বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতের প্রায় সব ক’টি ব্যাংকের পরিচালকরা একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে ঋণ দেয়া-নেয়া করেন। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক ৫ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া ৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ৩ হাজার ৭২২ কোটি টাকা, এবি ব্যাংক ৩ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৩ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যমুনা ৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংক ২ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ২ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংক ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ২ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংক ২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক ২ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, সাউথইস্ট ব্যাংক ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংক ১ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংক ১ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া নতুন কার্যক্রমে আসা এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালককে ঋণ দিয়েছে ৫১৪ কোটি টাকা, মধুমতি ব্যাংক ৩৫২ কোটি টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংক ৩৪৯ কোটি টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৩২৫ কোটি টাকা, মেঘনা ব্যাংক ৩০১ কোটি টাকা ও ফারমার্স ব্যাংক ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অনিয়ম করে ঋণ দেয়ার দায়ে ৫ জন পরিচালককে পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এসব ব্যাংকের পরিচালকরা সরাসরি ব্যাংকের মালিক না হলেও পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যথারীতি ব্যাংকের মালিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের নাকি ঋণ অনিয়ম করার সুযোগ বেশি। তারা সরাসরি ঋণ না নিলেও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বড় অংকের ঋণ দিয়েছেন মরিয়া হয়ে। আবার কেউ কেউ ঋণের গ্যারান্টার হয়েও ঋণ দিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংকের পরিচালকরাও খুব সহজে তাদের কাছ থেকে ঋণ নিতে পেরেছেন। সূত্র বলছে, এসব ঋণের অনুমোদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্য জড়িত।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে, সরকারি খাতের সোনালী ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালককে ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার ৯১২ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক ৫৭১ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৫৪৪ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক দিয়েছে ৫১৭ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) দিয়েছে ৪৬ কোটি টাকা। একইভাবে বিদেশী ব্যাংকগুলোর পরিচালকরাও ঋণ দেয়া-নেয়া করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। গেল বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটি অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক আল-ফালাহ ২২৬ কোটি ও সিটি ব্যাংক এনএ ১৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকদের।
জানতে চাইলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী যুগান্তরকে বলেন, তার ব্যাংকের ৫ জন পরিচালক ৬৪ কোটি টাকা নামে-বেনামে বের করে নিয়েছেন। আরও ১৬৫ কোটি টাকা নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ধরা পড়ে যায়।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, পরিচালকরা কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে ঋণ নিচ্ছেন, তবে সব ক্ষেত্রে নয়। সব মিলিয়ে তিনি এটাকে ‘আনইথিক্যাল’ আখ্যা দিয়েছেন।
মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, পরিচালকরা নিয়ম মেনে ঋণ নিলে আপত্তির কিছু দেখছি না। এর বেশি বলতে রাজি হননি তিনি।
একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংক সেক্টর নিয়ন্ত্রণকারী এ চক্রের (ব্যাংকগুলোর প্রভাবশালী পরিচালক) ইশারায় ঋণ দেয়া-নেয়া করা হয়। আবার বাস্তবে কেউ ঋণ পাওয়ার যোগ্য হলেও এ চক্রকে খুশি করতে না পারলে ঋণ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। অর্থাৎ ঋণ পেতেও আগাম কমিশন গুনতে হয়। একশ্রেণীর পরিচালকরা এভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে দুর্নীতি করে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের লোককে ঋণ দেয়া হয়। আবার তারা নিজেদের স্বার্থের প্রশ্নে নামে-বেনামে বারবার ঋণ নিচ্ছেন। এসব ঋণের বেশির ভাগই আর ফেরত আসছে না। হয়ে যাচ্ছে খেলাপি। এরপর অবলোপন। বর্তমানে মোট ঋণের ১০ শতাংশ খেলাপি দেখালেও এটি সঠিক নয়। প্রকৃত বিচারে খেলাপি আরও বাড়বে। তথ্য গোপনের মাধ্যমে খেলাপি কম দেখানো হচ্ছে। স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান করলে খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ব্যাংক মালিকরা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক ব্যাংকের পরিচালক বলেন, ব্যাংকের কোনো পরিচালক নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারবেন না। একই সঙ্গে গ্যারান্টার হওয়ারও সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি সাপেক্ষে মূল শেয়ারের ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন, যা উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এছাড়া এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে সমঝোতা করে ঋণ নিতে পারবেন না। তবে ব্যবসা উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনো ভালো ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন। যদিও তিনি অন্য ব্যাংকের পরিচালক হন। তবে সার্বিকভাবে ঋণ গ্রহণের উদ্দেশ্য পর্যালোচনা করে ঋণ নেয়া বা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.