নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানকে লড়তে হচ্ছে নিজ দলের সঙ্গেও। এর মধ্যে আইভীকে নিজ দলের একটি প্রভাবশালী অংশের নানামুখী প্রচারণার জবাব দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাছে নিজেকে পরিচিত করতে ছুটতে হচ্ছে সাখাওয়াতকে। দলীয় সূত্র জানায়, সরকারদলীয় সাংসদ শামীম ওসমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে অভিযোগ করেছেন যে তাঁর বাবা ও আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য প্রয়াত এ কে এম শামসুজ্জোহার বিষোদ্গার করেছেন মেয়র পদপ্রার্থী আইভী। গত সোমবার রাতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে এ অভিযোগ করেন শামীম ওসমান। তিনি আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচনে সহায়তা দিতে চাইলেও আইভী তাঁকে ডাকেননি। তিনি আইভীকে পাঠানো একটি খুদে বার্তাও ওবায়দুল কাদেরকে দেখান।
আইভী প্রয়াত শামসুজ্জোহাকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে শামীম ওসমানের নালিশ এবং কেন্দ্র কোনো ব্যবস্থা না নিলে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করবেন—এমন কথা গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহলে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল। অবশ্য এ ব্যাপারে শামীম ওসমানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কেন্দ্রে অভিযোগ করার সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতা বলেন, শামীম ওসমান দুটি অভিযোগ করেছেন, এটা ঠিক। তবে তিনি পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছেন, এমন কোনো কথা তিনি শুনতে পাননি।
আইভীর এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, তাঁরা জানেন আইভী এ ধরনের কোনো কথা বলেননি, তারপরও এসব কথা উঠলে মানুষের বিভ্রান্তি দূর করতে আইভীকে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। এতে সময়ের অপচয় হয়।
গতকাল আইভী শহীদনগরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এরপর জানতে চাইলে আইভী বলেন, শামীম ওসমান যে অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি শামসুজ্জোহা খান সম্পর্কে কোনো কটূক্তি করেননি। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে এ ধরনের অসত্য অভিযোগ করা মানে ভোটারদের বিভ্রান্ত করা। আমি আমার ভোটার ও সবাইকে আহ্বান জানাব এ ধরনের অপপ্রচার বিশ্বাস করবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না।’
কেবল ওসমান পরিবার নয়, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে এখন পর্যন্ত পাশে পাননি আইভী। যদিও এই আনোয়ার হোসেন গত নির্বাচনের সময় আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এবারও তাঁকে একই পদে কাজ করতে আইভী আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেন সাড়া দেননি। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদকেও এখন পর্যন্ত আইভীর পাশে দেখা যায়নি।
এ অবস্থায় দলের নেতাদের সবাইকে পক্ষে টানার চেষ্টায় আছেন আইভী। পাশাপাশি দলের ভেতর থেকে ষড়যন্ত্র হয় কি না, সেদিকেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। এটাকে একধরনের যুদ্ধ বলে মনে করছেন আইভীর সমর্থকেরা।
নিজেকে চেনাতে ছুটছেন সাখাওয়াত: এনির্বাচন নিয়ে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের মতো দলীয় কোন্দল নেই বিএনপিতে। দলটির মেয়র পদপ্রার্থী সাখাওয়াতের মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার সময় মূল নেতারা পাশেই ছিলেন। সাখাওয়াতের সমস্যা তাঁকে দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সেভাবে চেনেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির একজন নেতা বললেন, আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও সাখাওয়াতকে বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ভালোভাবে চেনেন না। কেউ কেউ সাখাওয়াতের নাম শুনেছেন, আবার কেউ কেউ তাঁকে দেখেছেন। এ কারণে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার আগে নেতা-কর্মীদের আস্থায় আনতে তাঁকে কাজ করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন স্থানে মিলাদ মাহফিল ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে কৌশলে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন সাখাওয়াত। এসব অনুষ্ঠানে নিজেকে বিএনপির প্রার্থীর পাশাপাশি সাত খুনের ঘটনার পর আন্দোলনের একজন নেতা হিসেবে পরিচয় তুলে ধরছেন। নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত খুনের ঘটনায় করা মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী এই সাখাওয়াত হোসেন খান।
সাখাওয়াত গতকাল সিটি করপোরেশনের বন্দর এলাকায় মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যান, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন।
সাখাওয়াত বলেন, ‘আমি বিএনপির একজন কর্মী। আমার পদ নেই, এটা ঠিক না। হয়তো বড় পদে ছিলাম না, তবে একসময় সহসম্পাদক ছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘তারপরও আমাকে মানুষ ভোট দেবে এর প্রথম কারণ ধানের শীষ মার্কা। দ্বিতীয় কারণ নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকা অবস্থায় সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম, সাত খুনের পর আন্দোলন করেছি, এখন মামলা পরিচালনা করছি।’
সাখাওয়াতের সঙ্গে কাজ করছেন এমন একজন বিএনপির নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিএনপির প্রভাবশালী তিন নেতা তৈমুর আলম খন্দকার, সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দীন ও আবুল কালাম ব্যস্ত তাঁদের ভাই ও সন্তানদের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন নিয়ে। তাঁরা পরে সবাই মেয়র প্রার্থীর পক্ষেও কাজ করবেন।
আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে আইভী ও সাখাওয়াত ছাড়াও মেয়র পদে আরও ছয়জন প্রার্থী হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত বাকি প্রার্থীদের নিয়ে মাঠে তেমন আলোচনা নেই। সব আলোচনা আইভী ও সাখাওয়াতকেন্দ্রিক।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.