রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় এবার সড়কের ওপর ‘উড়াল ফুটপাত’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)৷ প্রস্তাবিত এই ফুটপাতের দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটারের বেশি৷ তা নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা। ওই এলাকা থেকে হকারদের উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ জানায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি পাস হলে নির্মাণকাজ শুরু হবে। আর এর অর্থায়ন করবে সরকার। ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ জানায়, দেশের প্রথম এই উড়াল ফুটপাত (এলিভেটেড ওয়াকওয়ে) নির্মাণ প্রকল্প প্রস্তাব গত ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগে পেশ করা হয়েছে। উড়াল ফুটপাতটি সচিবালয়ের সামনে থেকে জিরো পয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, আহাদ পুলিশ বক্স, গোলাপ শাহ মাজার, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। সড়ক থেকে এর উচ্চতা নির্ধারণ করা হবে ফ্লাইওভারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। প্রাথমিকভাবে এর প্রশস্ততা ধরা হয়েছে আট ফুট। উড়াল ফুটপাত থেকে সড়কের সুবিধাজনক স্থানে পথচারীদের ওঠানামার জন্য থাকবে ২৬টি সিঁড়ি। এর মধ্যে ১০টি হবে চলন্ত। তবে ব্যয়বহুল এই প্রকল্প না করে গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার বিদ্যমান ফুটপাত দখলমুক্ত, প্রশস্ত এবং পথচারীবান্ধব করা জরুরি বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, উড়াল ফুটপাত পরিবেশবান্ধব নয় বলে তা অগ্রহণযোগ্য, আর উড়াল ফুটপাত হকারেরা দখল করবে না, তার নিশ্চয়তা কী?
বিষয়টি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, গুলিস্তানে উড়াল ফুটপাত নির্মাণ করলে নিচের ফুটপাত আরও বেশি বেহাল হবে৷ তাই উড়াল ফুটপাত না করে নিচের ফুটপাত পথচারীবান্ধব করা জরুরি৷ এতে বিনিয়োগ অনেক কম লাগবে৷ জানতে চাইলে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, হকারদের কারণে এই এলাকার ফুটপাত দিয়ে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা ঠিকমতো চলাচল করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে এলিভেটেড ওয়াকওয়ে বিকল্প হতে পারে। তা বাস্তবায়িত হলে চারজন লোক স্বচ্ছন্দে পাশাপাশি হাঁটতে পারবেন। এতে সড়কে যানজট ও দুর্ঘটনার হার কমে যাবে। সাঈদ খোকন বলেন, গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকার ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে অসংখ্যবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে ডিএসসিসি৷ কিন্তু তা দখলমুক্ত রাখা যাচ্ছে না৷ এই দখলের সঙ্গে পুলিশের কিছু সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নামধারী নেতা-কর্মীরা জড়িত৷ তাই পথচারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে চলাচলের জন্য বাধ্য হয়ে উড়াল ফুটপাত নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ফুটপাতের অবৈধ দখল উচ্ছেদে অভিযানও চলবে। তবে মেয়রের বক্তব্যের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান বলেন, ডিএমপির কোনো পুলিশ সদস্য ফুটপাত-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন৷ তারপরও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের৷ তারপরও নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন সময় হকারদের উচ্ছেদ অভিযান চালায় ডিএমপি৷ এই সমস্যার স্থায়ীভাবে সমাধানে বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যৌথ পরিকল্পনা দেওয়া দরকার৷ রাজধানীর গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকা একটি ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা। প্রায় সারা বছরই এই এলাকার ফুটপাত হকারদের দখলে থাকে। নির্বাচিত হওয়ার আগে ঢাকার দুই মেয়র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজধানীর সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারীবান্ধব করা হবে। নির্বাচিত হওয়ার পর গত বছরের ২০ ডিসেম্বর গুলিস্তানের ফুটপাত পথচারী চলাচলের জন্য পুরোপুরি পরিষ্কার করার ঘোষণা দেন সাঈদ খোকন। মেয়রের ঘোষণার দিনই গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার দুই শতাধিক অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় ডিএসসিসি। পরে গতকাল সোমবারসহ অন্তত ১০ বার এই এলাকাগুলোর সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে ডিএসসিসি। কিন্তু কয়েক দিন না যেতেই উচ্ছেদের জায়গাগুলো আবার দখল হয়ে গেছে। সম্প্রতি গুলিস্তান এলাকায় দেখা যায়, তিনটি প্রধান সড়কসহ সব ফুটপাত দখল করে রেখেছে হকাররা। হরদম বেচাকেনা চলছে। কোথাও কোথাও পথচারীদের হাঁটার জায়গা একটুও নেই। ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ জানায়, প্রস্তাবিত উড়াল ফুটপাতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ১২১ মিটার (সিঁড়ির দৈর্ঘ্য বাদে)। উড়াল ফুটপাতের ভিত্তি কোথাও রাস্তার পাশ দিয়ে, আবার কোথাও সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে তৈরি হবে। এতে পথচারীদের চলাচলের প্রবণতা বাড়াতে সৌন্দর্য বাড়ানো এবং পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা করা হবে। ওপরে ছাউনি নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি সফল হলে পরবর্তী সময়ে নিউমার্কেট, সদরঘাট, মতিঝিলসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় উড়াল ফুটপাত নির্মাণের পরিকল্পনা নেবে ডিএসসিসি৷ ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব খাদেম বলেন, প্রকল্পটি একনেকের সভায় অনুমোদন পেলে নির্মাণকাজ শুরু হবে। প্রকল্পটির নকশা তৈরিসহ অন্যান্য কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.