তখন বয়সে অনেক ছোট। বিটিভিতে ‘এই সব দিন রাত্রি’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হতো। নাটকটি ছিল আমার বেশ প্রিয়। বাড়িতে টিভি ছিল না। তাই কালিয়াচাপড়া চিনিকল ক্লাব কিংবা পুলেরঘাট বাজারে সুলতান উদ্দিন ভূইয়ার দোকানে নাটক দেখতে চলে আসতাম। শেষ পর্বটি পর্যন্ত দেখেছি। শেষ পর্বে নাটক শেষে টিভি স্ক্রিনে লেখাটি ছিল এ রকম, ‘সুখ দুখ আশা আকাঙ্ক্ষা ব্যথা বেদনা নিয়ে আমাদের এই সব দিন রাত্রি’।
আমার প্রবাসী জীবনের প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে এই নাটকের সাথে জীবনের বাস্তব চিত্রের মিল খুঁজে পাই। হাসিখুশি ভরা জীবনে কখন যে ঝড় আসে তা কেউ বলতে পারে না। অভাব-অনটন আর না পাওয়ার বেদনা জীবনকে তছনছ করে দেয়। স্বপ্ন ভেঙে যায় তাসের ঘরের মতো। আমার জীবনটাও এ রকমই।
কৈশরের দূরন্তপনা, কলেজ জীবনের হই হুল্লোড় পিষে যায় বাস্তবতার বুলডোজারে। অভাব-অনটন আর জীবন জীবিকার তাগিদে চাকরি খুঁজে হয়রান আর হতাশা থেকে মুক্তি পেতে একসময় হয়ে গেলাম দেশান্তর। ঠাঁই হলো সৌদি আরবের আবহা প্রদেশে। কাজ করি আবহা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। কতটুকু সুখে আছি প্রবাসে?
প্রবাসীদের জীবনে আবার সুখ কিসের! প্রতিনিয়ত দুঃখের সাথে যুদ্ধ করে আমার সামনে এগিয়ে চলা। চোখের জলে দিনের শুরু আর রাতের ঘুমানোর আগে দুই ফোঁটা চোখের জল ফেলা। স্ত্রী-পুত্র, বাবা-মা, ভাই-বোন আর স্বজনদের কাছে অনেক দূরে এ দুর্বিসহ একাকিত্বের নাম প্রবাসজীবন। আমি একজন বাবা। আজ আমার প্রিয় সন্তান দীপ্ত আহমেদ কাব্যের জন্মদিন। দীপ্ত যখন প্রথম পৃথিবীর আলো দেখে তখন মহাখুশির এই দিনে আমি তার পাশে থাকতে পারিনি। আজকে তার দ্বিতীয় জন্মবার্ষিকী চলে গেল নীরবে। তাই পিতা হয়ে সন্তানের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই। সরি দীপ্ত। শুভ জন্মদিন। অনেক অনেক ভালোবাসা রেখে গেলাম।
বাবা মারা গেলেন গত বছর ডিসেম্বরে। শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি। এ যে কতটুকু যন্ত্রণার তা দুই চার লাইনে তুলে ধরা অসম্ভব। প্রবাস মানে অভিশপ্ত জীবন। এখানে সুখগুলো চাপা পড়ে। জীবন পিষ্ট কষ্ট যন্ত্রণায়। তবুও সুখে আছি।
ফারুক আহমেদ সৌদি আরব থেকে
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.