জনপ্রশাসনের তিন স্তরে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া সত্ত্বেও বেশ কিছুসংখ্যক দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা এ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছেন। এতে প্রশাসনে পদোন্নতির আনন্দ অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছে। জানা যায়, কেউ কেউ তৃতীয় বা চতুর্থ দফায়ও পদোন্নতিবঞ্চিত থেকে গেছেন। স্বভাবতই তাদের মনে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। বিশেষ করে যথেষ্ট যোগ্যতা থাকার পরও যারা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। যখন কেউ পদোন্নতিবঞ্চিত হন এবং তাকে পাশ কাটিয়ে কম যোগ্যরা পদোন্নতি পেয়ে যান, তখন বঞ্চিতের যে অনুভূতি হয় তা সত্যিই বেদনার। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনই এক পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তার অনুভূতি তুলে ধরা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিবঞ্চিত এ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমার বেঁচে থাকার আনন্দটা কেড়ে নেয়া হয়েছে।’ এজন্য তিনি নিজের ‘ফাঁসি’ পর্যন্ত চেয়েছেন। তিনি বেশ জোরের সঙ্গেই বলেছেন, ‘যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের চেয়ে আমি কোনো অংশে অযোগ্য নই। বরং অনেকের চেয়ে অধিকতর যোগ্য ও দক্ষ বলে দাবি করতে পারি।’ সন্দেহ নেই, দক্ষতা ও যোগ্যতার বিচারে বঞ্চিতদের অনেকেই পদোন্নতি পাওয়ার দাবি রাখেন। পদোন্নতি না পাওয়ায় তাদের মনে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক। আগের পদোন্নতির সময় যারা বাদ পড়েছিলেন, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করার আশ্বাস দিয়েছিলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাই এবার তার অনুপস্থিতিতে এ বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতি দেয়ার বিষয়টিও মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।
যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তাদের পদোন্নতিবঞ্চিত থাকার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। এর ফলে প্রশাসনে ভারসাম্যহীনতা ও বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে। সরকারি চাকরিতে বদলির পাশাপাশি পদোন্নতি একটি স্বাভাবিক ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে বঞ্চিতরা নানা প্রশ্ন তুলবেন- এটাই স্বাভাবিক। প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। জনপ্রশাসনে পদোন্নতির ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা রয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, এবার সে নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। ব্যক্তিগত পরিচয়সহ নানামুখী তদবিরে মিলেছে পদোন্নতি। এটি অনাকাক্সিক্ষত। জনপ্রশাসনে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অতীতে দলীয় বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এটিও কাক্সিক্ষত নয়। দক্ষতা ও যোগ্যতাই পদোন্নতির প্রধান মাপকাঠি হওয়া উচিত। একটি গতিশীল প্রশাসনের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারের পক্ষ থেকে পেশাদার জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে যত কথা বলা হোক না কেন, যোগ্য ও মেধাবী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতিবঞ্চিত রেখে তা সম্ভব নয়।
আত্মীয়করণ, দলীয়করণ ও পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে জনপ্রশাসনে নানামুখী সংকট সৃষ্টি হয়। হচ্ছেও তাই। এর ফলে জনপ্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে। সুদক্ষ ও পেশাদার আমলাতন্ত্রের অভাবে জনপ্রশাসনে বিশৃংখল অবস্থা তৈরি হয় কেবল তাই নয়, এর ফলে দেশও ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ে। একটি সুশৃংখল ও পেশাদার জনপ্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করবে, এটাই কাম্য।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.