জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, যা পঙ্গু হাসপাতাল নামে সমধিক পরিচিত, নিজেরই এখন পঙ্গু হওয়ার দশা। এই পঙ্গুত্বের একটি বড় কারণ ঘটিয়েছে বেশকিছু দালাল চক্র। এ চক্রগুলোর প্রধান কাজ হচ্ছে হাসপাতালটিতে রোগীর ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা বা সিদ্ধান্তকে নিরুৎসাহিত করা। রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনদের ভড়কে দিয়ে তারা উন্নত চিকিৎসার কথা বলে নিয়ে যায় তাদেরই সঙ্গে সমঝোতামূলক কোনো প্রাইভেট ক্লিনিকে, অতঃপর মোটা অংকের সেই চিকিৎসা খরচের একটি অংশ চলে যায় তাদের পকেটে। জানা গেছে, ৮ থেকে ১০ জন দালাল একেকটি চক্রে ভাগ হয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপকর্মগুলো। এ ধরনের প্রায় ২০টি চক্র এখন সক্রিয় রয়েছে সেখানে। আরও জানা গেছে, দালাল চক্রগুলোর সহযোগী হিসেবে কাজ করছে হাসপাতালটির কিছু কর্মচারী ও নার্স। বলাই বাহুল্য, কর্মচারী ও নার্সরা যখন রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সেখানকার চিকিৎসার ব্যাপারে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলেন, তখন বিকল্পের সন্ধান করা ছাড়া তাদের কিছু করার থাকে না। কখনও কখনও জোরজবরদস্তি করেও স্থানান্তর করা হয় রোগীকে। শুধু পঙ্গু হাসপাতাল নয়, প্রায় প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই দালাল চক্রের আধিপত্য এখন স্পষ্ট। এরা দাপিয়ে বেড়ায় বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে অপারেশন থিয়েটার, কেবিন, ওয়ার্ড- সর্বত্র। টাকা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না তারা। ডাক্তাররাও অনেক সময় তাদের সামনে অসহায়ত্ব বোধ করেন। এসব হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পেতে হলে শুধু নিয়মমাফিক নির্ধারিত অংকের টাকা ব্যয় করলেই পার পাওয়া যায় না, সন্তুষ্ট করতে হয় দালালকে। পঙ্গু হাসপাতালসহ অনেক সরকারি হাসপাতালের আশপাশে গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক। তাদের উপার্জনের একটা বড় অংশের জোগান দিচ্ছে দালাল চক্র। পঙ্গু হাসপাতালেরই আশপাশে রয়েছে ছোট-বড় ২০০ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিকের অধিকাংশেরই নেই উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা। তারপরও রোগীর অভাব হয় না তাদের। তাদের গুণগান প্রচারের ভার নিয়েছে দালাল চক্রগুলো। আয়ের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দালালদের দিতে হলেও তাদের আপত্তি নেই। সরকারি হাসপাতালে রোগী হিসেবে চিকিৎসা নিতে যারা যান, তারা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ। তাদের সঙ্গেই যখন প্রতারণা করা হয়, তখন তা চরম অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। অথচ তাদের এই অপরাধের কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। মাঝে-মাঝে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে কাউকে কাউকে গ্রেফতার করে বটে, তবে তারা জামিনে বেরিয়ে আবারও শুরু করে অপকর্ম। আমরা মনে করি, মাঝে-মাঝে অভিযান চালিয়ে এই অপতৎপরতা বন্ধ করা যাবে না। এ সংকটের স্থায়ী সমাধান দরকার। কিছুকাল নিরবচ্ছিন্ন মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দালালদের প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেখা যেতে পারে পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়। এছাড়া দালালরা যাতে রোগী বা তার আত্মীয়-স্বজনদের সংস্পর্শে না আসতে পারে, সেজন্য সতর্কবাণী প্রচারেরও দরকার রয়েছে। রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজন ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে অনাকাক্সিক্ষত লোকের প্রবেশেও থাকতে হবে কড়াকড়ি। সবশেষ যে কথা, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে নিতে হবে শক্ত ব্যবস্থা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.