* হার দিয়ে শুরু হয়েছিল। প্রতিটি ম্যাচে পরাজয়ের স্বাদ নেওয়া বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড সফরও শেষ করল হার দিয়ে। মুশফিকুর রহিম ছিটকে পড়ায় ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্বের ভার ছিল তামিম ইকবালের কাঁধে। ৯ উইকেটে হারের পর কাল সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সব দায় মাথা পেতে নিলেন—
* সিরিজের শেষ টেস্ট আরও বেশি খারাপ হলো…
তামিম ইকবাল: বেশি খারাপ নয়। আগের ম্যাচগুলোর পুনরাবৃত্তি শেষটিতেও হয়েছে। খুব ভালো অবস্থায় থেকে শেষটা ভালো করতে পারিনি। পুরো সিরিজের সারাংশ এটাই। ভালো জায়গা থেকেও শেষ পর্যন্ত হেরে যাওয়া। অধিনায়ক হিসেবে ভালোভাবে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত ছিল আমার। আমি সেটা করতে পারতাম ব্যাটিং দিয়ে। দলের নেতা হিসেবে যেভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হয়েছি, বাকিদের কাছে ভালো বার্তা যায়নি। আমাদের আরও কিছু আউট, সেগুলো ভালোভাবে সামলাতে পারতাম। আমিসহ সিনিয়র ক্রিকেটার আরও ভালো করতে পারতাম। ভালো সুযোগ ছিল, সেটা নষ্ট করলাম।
* সিনিয়র ক্রিকেটাররা খারাপ করেছেন। তাঁদের সমস্যা কোথায় ছিল?
তামিম: দলে সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনেক বড় ভূমিকা থাকে। শুধু অধিনায়ক হলে হবে না। খেলা দিয়েও তাকে বোঝাতে হবে সে কত ভালো নেতা। এটাও বিশ্বাস করি, আমরা ১১ জন খেলি। সিনিয়রদের পাশাপাশি জুনিয়রদেরও সমান দায়িত্ব। তবে আমাদের (সিনিয়র) কাছে সবাই আশা করে। আমরা সিনিয়ররা ভালো করলে ওরাও উৎসাহ পেত। যেকোনো কারণেই হোক আমরা ঠিক সময়ে ঠিক কাজটা করতে পারিনি। ভালো বলে আউট হয়েছি, এমনও নয়। নিজেদের দোষেই আউট হয়েছি।
* সিনিয়রদের বারবার একইভাবে আউট হওয়ার ব্যাখ্যা কী? মুশফিকের অনুপস্থিতি কি খুব ভুগিয়েছে?
তামিম: মুশফিক অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে যে খেলছে না তার কথা বারবার বলতে চাই না। ওর জায়গায় যে এসেছে, সে ভালো করার জন্যই এসেছে। রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) হয়তো নিজের সেরা সময়ে ছিলেন না। তবে তাঁর চেষ্টা ছিল। আমি ওনাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি না। তবে আপনার পক্ষে যখন কিছু যাবে না, এ রকম আউট হতেই পারেন। ভালো সময় গেলে এই বলগুলো দেখবেন সুন্দরভাবে অন্য দিকে খেলছেন। ভালো টাইমিং হচ্ছে। নিজের কথা যদি বলি, পুরো সিরিজে এ রকম কোনো ইনিংস ছিল না যেটিতে আমি বিন্দুমাত্র সমস্যায় পড়েছি। অনায়াসে খেলছিলাম। কিন্তু সেটাকে কাজে লাগিয়ে ইনিংস বড় করতে পারিনি। আমার প্রতি দলের যে প্রত্যাশা কিংবা আমি নিজেও নিজের প্রতি যে প্রত্যাশা করি, সেটা না হওয়ায় হতাশ। সাকিবের টেস্ট সিরিজটা ভালো গেছে। ও এভাবেই ব্যাটিং করে। আজকের পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। আজকের আউটটা অন্যভাবে হতে পারত। হয়তো ও অন্যভাবে সামলাতে পারত। ও যখন ২১৭ রানের ইনিংস খেলেছে, ৩১টি চার মেরেছিল। ২০-২৫টি বাউন্ডারি এমন শটেই খেলেছে। এটাই তার শট।
* সাকিবের বিষয়টি নিয়ে বললেন, ‘সে এভাবেই ব্যাটিং করে’। এটা বলতে কী বুঝিয়েছেন?
তামিম: এটা বলতে বুঝিয়েছি যে শটটা সে খেলেছে, একই শট খেলে আগের টেস্টে ২১৭ রান করেছে। সেটা একটা রেকর্ডও। আগেই বলেছি, এই শটে ২০টি বাউন্ডারি পেয়েছে। কাট শটে সে সাফল্য পায়। তবে হ্যাঁ, সে আরও ভালোভাবে এটা কাজে লাগাতে পারত। তখন যত ফিল্ডারই থাকুক, সে হয়তো আউট হতো না।
* পুরো সফরে বাংলাদেশের ১৮-২০টি ক্যাচ পড়ার ব্যাখ্যা কী?
তামিম: আমরা যখন দেশে খেলি, এটা কোনোভাবে সামলে নিতে পারি। একটা ক্যাচ হাতছাড়া হলেও কন্ডিশন আমাদের পক্ষে থাকে। কিন্তু যখন বিদেশে খেলি, একটা ক্যাচও ছাড়া উচিত না। আমরা তো ওদের মতো এত সুযোগ তৈরি করতে পারব না। আমাদের বোলারদের একটা সুযোগ তৈরি করতে অনেক চেষ্টা করতে হয়। এখানেই একটা পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়। সবগুলো কিংবা ৭০ শতাংশ ক্যাচও ধরতে পারলে ফল অন্য রকম হতো। তবে ক্যাচ কেউ ইচ্ছে করে ছাড়ে না। এটা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যতেও কাজ করতে হবে, বিশেষ করে স্লিপ কর্ডনে। হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ খুঁজবে।
* বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণ কী বলবেন?
তামিম: আমরা সহজ পথে হেঁটেছি। কঠোর পরিশ্রম করতে চাইনি। এমন পরিস্থিতি আসে, নেতার কাছ থেকে সতীর্থ আশা করে সামনে থেকে পথ দেখাবে। আমি তা পারিনি। যেভাবে আউট হয়েছি, রাবিশ! আমার কাজ ছিল বাজে বলের জন্য অপেক্ষা করা। সেখান থেকে রান তোলা। দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করা। আমি যদি বড় জুটি গড়ে তুলতে সাহায্য করতাম ম্যাচের ছবি অন্য রকম হতো। পুরো দায় আমি নিচ্ছি।
* সামনের ভারত সফরের জন্য কী শিক্ষা পেলেন?
তামিম: আমাদের খুব বেশি সময় নেই। সবাই দেশে ফিরে ভাববে কী ভুল হয়েছে। নিজের খেলা বিশ্লেষণ করবে। আমরা আবারও এক হব। এটা অনেক বেশি মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, স্কিলের নয়। আমাদের শুধু ঠান্ডা মাথায় বসে ভাবতে হবে, ভুল কী হলো, কোনটা করা উচিত হয়নি।
* এই সিরিজে কামরুল ইসলামের বোলিং নিয়ে কী বলবেন?
তামিম: দারুণ বোলিং করেছে সে। পেসারদের নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। তারা দুর্দান্ত করেছে। শুধু বোলিং নয়, ব্যাটিংয়েও।
* সফরে আমাদের প্রাপ্তি কী?
তামিম: বাসায় গিয়ে নিজেদের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলে মনে পড়বে, ছোট ভুলগুলো যদি না করতাম দু-একটা ম্যাচ জিততে পারতাম। এই উপলব্ধি যদি সবার মধ্যে আসে, বিদেশের মাটিতেও আমরা দল হিসেবে ভালো করতে পারব।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.