নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে শিগগিরই বহুল আলোচিত সার্চ কমিটি গঠিত হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি। আশা করা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির চিঠি পাওয়ার পর দ্রুত এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়েই গঠন করা হবে সার্চ কমিটি। কেননা কমিটির হাতে সময় থাকবে খুব কম। যদি সার্চ কমিটির সদস্যদের নিয়েই বিতর্ক দেখা দেয়, তাহলে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি পিছিয়ে পড়তে পারে। এরই মধ্যে বিএনপি মহাসচিব অগ্রহণযোগ্য সার্চ কমিটির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে সম্ভাব্য সার্চ কমিটি নিয়ে উত্তপ্ত তর্কবিতর্ক হচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, শেষ ভরসা রাষ্ট্রপতি এমন একটি সিদ্ধান্ত নেবেন যাতে বিষয়টি নিয়ে কেউ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সুযোগ না পায়। মনে রাখা দরকার, সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত কমিশনই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবে। কাজেই জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিতকরণে ‘গোড়ায় গলদ’ কাম্য হতে পারে না। এটা অজানা নয়, বিদায়ী নির্বাচন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের ভূমিকা হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। সম্প্রতি বিদায়ী কমিশনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে, নতুন কমিশন তাদের মতো ‘নিরপেক্ষ’ হবে। ফলে এ নিয়ে জনমনে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। দেশবাসীর মধ্যে যেন নির্বাচন কমিশন ও ভোটাধিকার নিয়ে কোনো ধরনের সংশয় তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায়িত্ব। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপে প্রায় সব দলই ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। তবে সময় স্বল্পতার কারণে সার্চ কমিটির প্রস্তাবও এসেছে। আমরা আশা করব, নতুন কমিশন গঠনের পর ৫ বছর বসে না থেকে দ্রুত সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করা হবে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ বিবেচনায় ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের ভোটকে পবিত্র আমানত হিসেবে বিবেচনা করবেন এমন নিষ্ঠাবান ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সার্চ কমিটি ও কমিশনে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নেয়া সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। যেহেতু বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেহেতু নতুন কমিশন ও সার্চ কমিটি গঠনে এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সবসময় নিজেদের স্বার্থকেই বড় করে দেখে থাকে। এমনকি স্বার্থের জন্য জাতির ঐক্যের প্রতীক রাষ্ট্রপতি পদকে প্রশ্নের মুখে ফেলার নজিরও নিকট-অতীতে দেখা গেছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, নতুন কমিশন গঠন এবং এ লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এমন ঘটনার কোনো ধরনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। রাষ্ট্রপতি তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় এবং দলগুলোর প্রস্তাবের আলোকে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবেন- এটাই কাম্য।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.