নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার আশেপাশে একজন মহিলাকে প্রতিদিন ভিক্ষা করতে দেখা যায়। একটা চোখ অন্ধ এই ভিক্ষুকের নাম জোসনা। বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বামী পরিত্যক্তা জোসনার দিন শেষে আয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর রাতে থাকার জন্য ব্যবস্থা রেলস্টেশনে কিংবা গেটবাজারে কোনো দোকানের বারান্দায়। দিনের আয় থেকে আধা পেটা খেয়ে বাকি অর্থ ছেলের জন্য জমিয়ে রাখা। সপ্তাহ শেষে জমানো টাকা আদরের ছেলে জাবেদের লেখাপড়ার খরচ হিসেবে দিতে হয় নীলফামারী সদরের পূর্ব পলাশবাড়ী আরজি হাটখোলা গ্রামে মেয়ে নুর নাহারের কাছে। বোনের বাড়িতে থেকেই একমাত্র ছেলে জাবেদ পড়াশুনা করছে। শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে অন্ধ ভিখারিণীর সঙ্গে বই হাতে ১২/১৩ বছরের এক ছেলের দেখা মিলে। কৌতূহলবশত: ওই বালক আর বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বললে এই কাহিনী বের হয়ে আসে। ছেলেটির নাম জাবেদ। সে নীলফামারীর পলাশবাড়ী পরশমণি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ক শাখার ছাত্র। ক্লাসে তার রোল নম্বর ৭। বৃদ্ধা জোবেদা বিবি ওরফে জোসনা তার মা। ভিক্ষা করে এ সপ্তাহে উপার্জন করা ৪৮০ টাকা দিয়ে স্থানীয় একটি লাইব্রেরি থেকে ছেলের জন্য ক্লাসের প্রয়োজনীয় কিছু বই কিনে রেলস্টেশনে ফিরছেন। কথা প্রসঙ্গে জোসনা জানান, তার গ্রামের বাড়ি ডোমারে। স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছেন। ভিক্ষা করে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন নীলফামারী সদরের পূর্ব পলাশবাড়ী আরজি হাটখোলা গ্রামের ভ্যানচালক ওমর আলীর সঙ্গে। আর সেখানেই দৈনিক উপার্জনের টাকা মেয়ের হাতে দিয়ে ছেলে জাবেদকে রেখেছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জোসনা জানান, ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতেই আমার এতো পরিশ্রম। জাবেদ জানান, তার মায়ের আশা পূরণ করতে সে প্রাণপণ চেষ্টা করছে। তার মায়ের জন্য সে গর্ব করে বলে, মায়ের ওইটুকু উপার্জন দিয়েই এখন চলছি। আগামীতে কি হবে তা জানি না। তবে নিরাশ আমি নই। যার কেউ নেই তার পাশে সৃষ্টিকর্তা আছেন। এক প্রশ্নের জবাবে জাবেদ জানান, স্কুল ড্রেস, জুতো আর ব্যাগের জন্য মাকে বলেছি। কোনো দিন পাবো তা জানি না।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.