অসংখ্য জনপ্রিয় লোকগানের গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী কুটি মনসুর আর নেই (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। মঙ্গলবার রাতেই কুটি মনসুরের মরদেহ নেয়া হয় রাজধানীর বনশ্রীর ভাড়া বাসায়। গতকাল সেখানে স্থানীয়ভাবে আয়োজিত জানাজা শেষে মরদেহ নেয়া হবে শ্বশুরবাড়ি নবাবগঞ্জের দোহারে। সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে দোহারেই স্ত্রী জাহানারা বেগমের কবরের পাশে চিরশায়িত করা হয় তাকে। গত ২২শে ডিসেম্বর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে (ব্রেইনস্ট্রোক) আক্রান্ত হন কুটি মনসুর। ২৩শে ডিসেম্বর তাকে ভর্তি করা হয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ২৯শে ডিসেম্বর তাকে স্থানান্তর করা হয় ঢামেক হাসপাতালে। সোমবার রাতে কুটি মনসুরের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। এসময় আইসিইউ সাপোর্ট পাওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় তা পাওয়া সম্ভব হয়নি। ১৯২৬ সালের ২৮শে ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার লোহারটেক গ্রামে জন্ম কুটি মনসুরের। তার পিতার নাম আবেদ আলী খান ও মাতার নাম আবেদুন্নেসা। ১২ বছর বয়স থেকে সংগীতে তালিম গ্রহণ শুরু করেন এবং ১৫ বছর বয়সেই নিজে গান রচনা করে তাতে সুর সংযোজন করে নিজেই বিভিন্ন মঞ্চে পরিবেশন করেন কুটি মনসুর। কুটি মনসুর ১৯৫৯ সালে মৎস্য অধিদপ্তরে চাকরিতে যোগদান করেন। একই বছর কণ্ঠশিল্পী এবং ১৯৬২ সালে গীতিকার ও সুরকার হিসেবে বেতারে তালিকাভুক্ত হন। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পরিদপ্তরের অধীনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধকরণের নিমিত্তে তার রচিত ৩০০ গান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাউল শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কণ্ঠশিল্পী অডিশন বোর্ডের বিচারক হিসেবে দীর্ঘদিন তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমিতে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষ এবং আনসার ভিডিপিতে ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সংগীত প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরেরর মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও দেশভিত্তিক প্রচুর গান ও কবিতা রচনার পাশাপাশি তিনি প্রায় ৫০টি বিষয়ে এ পর্যন্ত ৮ হাজার গান রচনা ও ৪ হাজার ৫০০ গানের সুরারোপ করেছেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে ‘হিংসা আর নিন্দা ছাড়ো রে’, ‘আইলাম আর গেলাম’, ‘যৌবন জোয়ার একবার আসে রে’, ‘আমি কি তোর আপন ছিলাম না রে জরিনা, ‘কে বলে মানুষ মরে’ প্রভৃতি। তার রচিত ও সুরারোপিত প্রায় ৫০০ গান দেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পীদের কণ্ঠে বিভিন্ন অডিও ক্যাসেট কোম্পানি থেকে প্রকাশ হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.