যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ হচ্ছে না। এখনো অনেক স্থানে ভোট গণনা চলছে। কিন্তু তার আগেই নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা করা হয়ে গেছে। পরাজয় মেনে নিয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। তিনি প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট অর্জন করতে পারেন নি। কিন্তু জনপ্রিয় বা পপুলার ভোটে তিনি এগিয়ে আছেন অনেক বেশি। সে জন্য তার অনেক নেতাকর্মী, সমর্থক মেনে নিতে পারছেন না প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পকে। এরই মধ্যে পপুলার ভোটের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার দাবি উঠেছে। তাতে স্বাক্ষর করেছেন কয়েক লাখ মার্কিনি। ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি কত ভোট বেশি পেয়েছেন তা নিয়েও আলোচনা চলছে। ১৮ই নভেম্বর এ বিষয়ে ইউএস ম্যাগাজিনে একটি রিপোর্ট লিখেছেন সাংবাদিক ক্যাথি ক্যাম্পবেল। তিনি লিখেছেন, এখনো ভোট গণনা চলছে। কিন্তু নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করার কোনো উপায় নেই। ফল অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে অনেক বেশি পপুলার ভোট পেয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। এ সংখ্যা অনেক বেশি। ১৮ই নভেম্বর শুক্রবার নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান কুক পলিটিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায় ডনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে ১৪ লাখ ৩০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। হিলারি পেয়েছেন ৬ কোটি ৩০ লাখ ৪৯ হাজার ৬০৭ ভোট। ট্রাম্প পেয়েছেন ৬ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার ৪৮৪ ভোট। এত ভোটের ব্যবধান থাকলেও ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের হিসাবে ৯ই নভেম্বর দিনের শুরুতে সাবেক রিয়েলিটি টিভি ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী ডনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়। এটা এক ঐতিহাসিক হতাশার কথা। এরই মধ্যে নির্বাচনের এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের হিসাবে ট্রাম্প ৩০৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এক্ষেত্রে হিলারির ঝুলিতে জমা পড়েছে ২৩২টি। এখনো মিশিগানের মতো যেসব রাজ্যে ভোট গণনা বাকি আছে তার দু’চারটিতে হেরে গেলেও এটা নিশ্চিত যে, রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পই প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট সংগ্রহে রাখবেন। এর নিচে কোনোভাবেই আসবে না তার ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। এরই মধ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ব্যবস্থা বাদ দিয়ে পপুলার ভোট হিসাবে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ঘোষণার দাবি উঠেছে জনমানুষের কাছ থেকে। ঈযধহমব.ড়ৎম ওয়েবসাইটে এমন আবেদন জানিয়ে একটি পিটিশন চালু করা হয়েছে। এতে এ যাবৎ স্বাক্ষর করেছেন ৪৪ লাখেরও বেশি মানুষ। আহ্বান জানানো হয়েছে ইলেক্টোরাল কলেজ প্রতিনিধিদের প্রতি যাতে তারা হিলারিকে ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট বানান। কারণ, তিনি পপুলার ভোট বেশি পেয়েছেন। এ নিয়ে চতুর্থ বার যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটলো। এর আগে তিনবার পপুলার ভোট বেশি পেয়েও তিনজন প্রার্থী পরাজিত হয়েছিলেন। তার মধ্যে ২০০০ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশকে পপুলার ভোটে পরাস্ত করেন ডেমোক্রেট আল গোর। তাদের ভোটের ব্যবধান ছিল ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৮১৬। এ নির্বাচনে আল গোর বেশি ভোট পেলেও ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট বেশি পেয়েছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। আর তার ফলে তিনিই হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। ১৮২৪ সালে জন কুইন্সি এডামস পপুলার ভোট ও ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে অ্যানড্রু জ্যাকসনের কাছে পরাস্ত হন। কিন্তু জ্যাকসন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট অর্জনে ব্যর্থ হন। ফলে প্রতিনিধি পরিষদে ভোট হয়। তাতে এডামস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৮৮ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী বেঞ্জামিন হ্যারিসন ডেমোক্রেট প্রার্থী গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের কাছে ৯০ হাজারের বেশি পপুলার ভোটে হেরে যান। কিন্তু নির্বাচনে তিনি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট অর্জন করেন ২৩৩টি। ক্লিভল্যান্ড পান ১৬৮ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট। এর ফলে বেঞ্জামিন হ্যারিসন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এমন ইতিহাস থাকায় ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ব্যবস্থা বাদ দিতে গত ১৫ই নভেম্বর ডেমোক্রেট দলের অবসরপ্রাপ্ত সিনেটর বারবারা বক্সার একটি আবেদন করেছেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার এই সিনেটর বলেছেন, আমার জীবনে দুটি নির্বাচন দেখেছি। এতে নির্বাচিত প্রার্থী পপুলার ভোটে নির্বাচিত হতে পারেন নি। তিনি আরো বলেছেন, ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট একটি পুরনো, অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এর মধ্য দিয়ে আমাদের আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতিফলন ঘটে না। তাই অবিলম্বে এ নিয়ম পরিবর্তন করা প্রয়োজন। প্রতিজন মার্কিনি চান তাদের প্রত্যেকের ভোট গণনায় নেয়া হোক। উল্লেখ্য, ক্যালিফোর্নিয়া ও ইউটাহ রাজ্যে এখনো ৪০ লাখের মতো ভোট গণনা বাকি। এরই মধ্যে হিলারি এগিয়ে আছেন ৩২ লাখ ৫০ হাজার ভোটে। ফলে অনেক রাজনৈতিক বোদ্ধা মনে করছেন ট্রাম্পের তুলনায় হিলারি ২০ লাখের মতো ভোটে এগিয়ে থাকবেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.