বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাস উল্টালে কিংবদন্তিদের তালিকার প্রথম সারিতেই পাওয়া যাবে কার্টলি অ্যামব্রোসের নাম। তাঁকে স্মরণ করেই যেন তৈরি হতো প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপ। মাঠে অ্যামব্রোসের উপস্থিতি মানেই ক্রিকেটপ্রেমীদের বাঁধভাঙা উল্লাস আর অবিস্মরণীয় সব রেকর্ড। ১৯৯৩ সালের আজকের দিনে এমনই এক রেকর্ড করেন এই ক্যারিবীয় বোলার। সেদিন অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেটে বিশ্ব দেখেছিল এক বোলারের নারকীয় রূপ।
পার্থে ‘দ্য ফ্রাংক ওরেল ট্রফি’র শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে টসে জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় অজিরা। ব্যাট হাতে ইনিংস শুরু করলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও ডেভিড বুন। খুব দেখেশুনে শুরু করলেও ২৭ রানেই প্রথম উইকেটের পতন। ইয়ান বিশপের বলে ১০ রান করে বিদায় নেন টেস্ট মাস্টার ল্যাঙ্গার। বুনকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটিং তারকা স্টিভ ওয়াহ। তবে ব্যক্তিগত ১৩ রানে পৌঁছাতেই বিশপের বলে জুনিয়র মুরের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। দলীয় রান তখন ৫৮। এবার বুনের সঙ্গে দলের হাল ধরতে মাঠে নামলেন মার্ক ওয়াহ। আর এর পর থেকেই শুরু হলো ইতিহাসের সূচনা। দলীয় ৮৫ রানে মার্ক ওয়াহকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখায় নিজের খাতা খোলেন কার্টলি অ্যামব্রোস। স্কোর বোর্ডে মাত্র ৫ রান যোগ হতেই দেন দ্বিতীয় হানা। ব্যক্তিগত ৪৪ রান করে বিদায় নেন বুন। কিছু বুঝে ওঠার আগে অ্যামব্রোসের পরের বলেই এবার বিদায় নিলেন অ্যালেন বোর্ডার। এরপর দলীয় ১০০ রানে পৌঁছাতে আবারও হাজির সেই পেস দানব। শূন্য রানেই বিদায় নিলেন ইয়ান হিলি। মোটে দুই রান যোগ হতেই অ্যামব্রোসের বোলে আর্থারটনের তালুবন্দি হন মার্ভ হিউজ। এরপর ১০৪ রানে ড্যামিয়েন মার্টিনকে ও জো অ্যাঞ্জেলকে বিদায় জানালেন সেই ক্যারিবীয় জায়ান্ট। আর তারপরই হয়ে গেল সেই বিশ্বরেকর্ড। ৩২ বলে ১ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট। এমন স্পেলে যতটা অবাক অ্যামব্রোস হন, তার চেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়তো ক্রিকেট বিশ্ব হয়েছিল। অবশেষে দলীয় ১১৯ রানে শেন ওয়ার্ন রান আউটের মধ্য দিয়েই থেমে যায় অসিদের ইনিংস।
তবে ওই ম্যাচে ব্যাট হাতেও কিন্তু দুর্দান্ত ছিল ক্যারিবীয়রা। ফিল সিমন্সের ৮০ ও কেইথ আর্থারটনের ৭৭ রানের ওপর ভর করে ৩২২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৭৮ রানে অল আউট হয় স্বাগতিকরা। আর ২৫ রানের জয় পায় টিম ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বিখ্যাত এই ক্রিকেটারের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর আগমন। কার্টলি অ্যামব্রোস তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ৯৪টি টেস্ট খেলে নিয়েছেন ৪০৫টি উইকেটের। তাঁর সেরা বোলিং বিশ্লেষণটা ৪৫ রানে ৮ উইকেট। ব্যাট হাতে একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ মোট রান করেছেন ১৪৩৯। এ ছাড়া একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচেও বল হাতে তিনি সফল। ১৭৬ ম্যাচে পেয়েছেন ২২৫ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ১৭ রানে ৫ উইকেট। ২০০০ সালের ৩১ আগস্ট এই কিংবদন্তি ক্রিকেট মাঠকে বিদায় জানান। অবসর-পরবর্তী সময়ে তিনি কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.