একই শিল্পী, একই লোকেশন, একই নির্মাতা। পাশাপাশি মানহীন গল্প ও দক্ষ নির্মাণশৈলীর অভাব তো রয়েছেই। এর সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে রয়েছে অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপন প্রচার। টিভি পর্দার সামনে বসলে নাটকে এমন চিত্রেরই দেখা মেলে। নাট্যাঙ্গনের চলতি অবস্থা এতটাই ভয়াবহ। নাটক দেখতে গেলে যেন স্বস্তি নেই। প্রায় প্রতিটি চ্যানেলের নাটকে ঘুরেফিরে একই শিল্পীর পুনরাবৃত্তি। যার ফলে ভিন্নধর্মী কিছুর দেখা মিলছে না। আর দৃশ্যায়ন? উত্তরার বাড়িগুলো আর গ্রামীণ পটভূমির ক্ষেত্রে পূবাইলের গুটিকয়েক শুটিং হাউজ। এছাড়া আর ব্যতিক্রমী লোকেশন তেমন একটা চোখেই পড়ে না। বিশেষত শহরকেন্দ্রিক নাটকের ক্ষেত্রে উত্তরার বাড়িগুলোর যেন কোনো বিকল্প নেই। টিভি সেটের সামনে দর্শক বসে একই ধরনের লোকেশনে নির্মাণ হওয়া গৎবাঁধা নাটক দেখে বিরক্ত। একজন নির্মাতা একসঙ্গে দু-তিনটি ধারাবাহিক নির্মাণ করছেন। আর সময় পেলে খণ্ড নাটক নির্মাণ তো রয়েছেই। বিষয়টি কি দাঁড়ালো? একজন নির্মাতার হাতে এত কাজ! একসঙ্গে একাধিক নাটকে তাকে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। এর ফলে নির্মাণশৈলীর যে বারোটা বাজছে সেদিকে কোনো নজর নেই। অপরদিকে একইভাবে একজন রচয়িতা একাধিক নাটক রচনা করছেন। লেখালেখির মতো এমন একটি সৃজনশীল কাজ করতে গিয়ে একাধিক জায়গায় মনোযোগ দেয়ার ফলে কোয়ালিটি স্বাভাবিকভাবেই থাকছে না। শুধু তাই নয়, একাধিক স্ক্রিপ্ট লিখতে গিয়ে গল্পের ছন্দ হারিয়ে বসেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে দেশীয় টিভি নাটক দর্শক টানতে পারছে না। আর এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক। আজকাল টিভি পর্দায় হরহামেশাই অনেক কমেডি খণ্ড ও ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে। মূলত এই যান্ত্রিক জীবনে দর্শকের মুখে একটু হাসি ফোটানোর লক্ষ্যেই এ ধরনের নাটক নির্মাণের প্রয়াস চলছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হচ্ছে উল্টোটা। এখানেও গলদ থেকেই যাচ্ছে। কমেডি নাটকেও চলে এসেছে ভাঁড়ামি। হাসাতে গিয়ে বরং বিরক্তির কারণ হচ্ছে কিছু নাটক। টিভিবোদ্ধা অনেকের দাবি, এভাবে জোর করে হাসানোর কোনো মানে খুঁজে পান না দর্শক। এতসব সমস্যার মাঝে ড্রইংরুম মিডিয়ার দর্শকের বিরক্তির আরেক কারণ হলো নাটকের মাঝে অতিমাত্রায় বিজ্ঞাপন প্রচার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি ভালো নাটক চোখে পড়লেও সেটা মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের জন্য দর্শক বিরক্ত হয়ে রিমোট চেপে অন্য চ্যানেলে চলে যাচ্ছেন। এদিকে সমস্যা নিয়ে নাট্যবোদ্ধাদের সঙ্গে কথা হলে তারাও বিষয়গুলো নিয়ে শঙ্কার কথা জানান। অবশ্য এসব সমস্যার পেছনে বড় কারণ চিহ্নিত করে তার বলেছেন, বর্তমান সময়ের নাটকের এই হালের জন্য স্বল্প বাজেট দায়ী। নাটকে আগের মতো ভালো বাজেট না থাকায় মানসম্পন্ন গল্প, শিল্পীর বৈচিত্র্যতা, লোকেশনে ভিন্নতা আনা সম্ভব হয় না। সেজন্য নাট্যবোদ্ধারা নাটকের বাজেট বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি চ্যানেলগুলোকে বিজ্ঞাপন প্রচারের সময় সময় নির্দিষ্ট করে দেয়ার কথাও বলেছেন। পুরনোদের সঙ্গে সঙ্গে মেধাবী তরুণ শিল্পী, নির্মাতা, রচয়িতাদের সুযোগ সৃষ্টির জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে তারা মত দিয়েছেন। আর এসব সমস্যা না কাটলে নাট্যাঙ্গনের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে বলেও মনে করছেন নাট্যবোদ্ধারা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.