ইউএই এক্সচেঞ্জ। নামেই বোঝা যায় মুদ্রা বিনিময় তার কাজ। অর্থ প্রেরণেও প্রতিষ্ঠানটির বড় ভূমিকা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশের কর্মজীবীদের অনেকেই এ জন্য এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই ওই দেশের জন্যও এই প্রতিষ্ঠানটির কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। কোম্পানির কর্মকর্তা কিংবা সেবকেরা সেটা স্বীকারও করেন। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এক্সচেঞ্জটি এরই মধ্যে বৈধ উপায়ে অর্থ প্রেরণকে উৎসাহিত করার জন্য সামাজিক সচেতনতা অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের নাম আমার বাংলাদেশ।
দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা তাদের কষ্টের অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এতে উপস্থিত হচ্ছে তাদের পরিবার আর দেশে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ইউএই এক্সচেঞ্জের জন্মলগ্ন থেকে দেশপ্রেমী এই শক্তিটিকে সহযোগিতা করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে তারা আরও সুনির্দিষ্ট করে ভেবেছে। গ্রাহকেরা যাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে মুদ্রাকে সুরক্ষা দিতে পারে, সে ব্যাপারে সযত্ন কৌশল তার। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করেছে—সঠিক পথে পাঠাই টাকা, সচল রাখি দেশের চাকা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান ইউএই এক্সচেঞ্জের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা দেশে স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখছে। সড়ক-সেতু-জনপথসহ বিশাল বিশাল প্রকল্প হাতে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে এ জন্য। তিনি যোগ করেন, অর্থনৈতিক বিকাশ চলমান রাখার জন্য বৈধপথে টাকা প্রেরণও জরুরি। তিনি এ ব্যাপারে ইউএই এক্সচেঞ্জের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠানটি একটি বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ করেছে। বিভিন্ন ক্যাম্প, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান যেখানে বাংলাদেশি আছেন সেখানে প্রচার করা হয় এর উদ্দেশ্য। এক্সচেঞ্জের বাংলাদেশ করিডর প্রধান সুলতান মাহমুদ। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, মহানন্দের মধ্য দিয়ে এ ছবির প্রচার শুরু হয়ে গেছে। পর্যায়ক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিটি প্রদেশে প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এর কথা। হুন্ডি বা হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে অনেকেই মধ্যস্বত্বভোগীদের খপ্পরে পড়েন। এতে শুধু তারাই শোষিত হন না, দেশেরও ক্ষতি হয়। এই সত্যটি বোঝানোর জন্যই ব্যাপক তাদের কর্মসূচি। বৈধপথে টাকা পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে তারা একটি ঘোষণাপত্রও ছেপেছেন। মাহমুদ বলেন, গ্রাহকেরা তাদের এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তারা টাকা পাঠাচ্ছেন এবং এই উদ্যোগকে জীবনের জয়গান হিসেবে উদ্যাপন করছেন। সামাজিক মাধ্যমে তাদের এ প্রচারপত্রটি তিন লাখ পাঠক পড়েছেন বলে জানান তিনি। নির্দিষ্ট সচেতনতামূলক চিত্রটি সম্পর্কে সুলতান মাহমুদ বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে একযোগে তিনটি ইলেকট্রন মাধ্যমে শুরু হচ্ছে এর প্রচার। বৈধভাবে অর্থ প্রেরণে মানুষ যাতে আরও বেশি আগ্রহী হন সে জন্য ইউএই এক্সচেঞ্জ ইতিমধ্যে একটি মুদ্রা প্রেরণ পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এবারই এর শুরু। এরপর থেকে প্রতি বছরই এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। সম্প্রতি আমার বাংলাদেশ অভিযানের উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানী আবুধাবির ডুসিট থানি হোটেলে এক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ ও ইউএই এক্সচেঞ্জ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমথ মাঙ্গাতও সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখানে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০ হাজার টাকা করে তিনটি পুরস্কার দেওয়া হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন মুহম্মদ আফজাল হোসেন, নূর মোহাম্মদ ও জাইদুল ইসলাম। দশ বছরের বেশি সময় ধরে এই তিন যুবক বাংলাদেশে বৈধ উপায়ে টাকা পাঠাচ্ছেন এই এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে। এরা অবশ্যই জাতীয় আদর্শ। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে তাদের অবদান প্রশংসাযোগ্য। ইউএই এক্সচেঞ্জ এই সত্যটি তুলে ধরে শুধু তিন যুবকের স্বীকৃতি নয়, নিজেও বড় আসনে জায়গা করে নিল। ইউএই এক্সচেঞ্জটি জন্মলগ্ন থেকে এর সেবার হাত ক্রমশ সম্প্রসারিত করে যাচ্ছে। এ জন্য এরা কুড়িয়েছে গ্রাহকেরা প্রাণঢালা ভালোবাসা। আবুধাবির এক গ্রাহক লাকী হালদার উল্কা। তিনি বলেন, এদের সেবা অতুলনীয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা সক্রিয় ও প্রাঞ্জল তাদের কথাবার্তা। সদা উৎফুল্ল, তারা কাজ করে ক্লান্ত হন না, বলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন পরিষদ আবুধাবির সাধারণ সম্পাদক আজিম ফজলুল কাদের। তিনি বলেন, চমৎকার তাদের সেবা। তসলিম চৌধুরী একটি কোম্পানির প্রধান হিসাবরক্ষক। তারও মন্তব্য শীর্ষস্থানীয় এ মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান। সেবা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা—সব দিকের বিবেচনায়। ছবিয়াল বোরহান বলেন, অনেক অনেক ভালো তাদের সেবা। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি পেশাগত মানের ব্যাপারে খুবই যত্নবান। যারা তৃণমূল পর্যায়ে কোম্পানির পক্ষে অবদান রেখে যাচ্ছেন, তাদের একজন ইন্দিরা পাল কলি। তারও সঙ্গে কথা বলি। তার আছে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার তৃপ্তি। ইন্দিরা পাল বলেন, কর্মীবান্ধব পরিবেশ আছে বলেই এখানে ছোট সন্তান লালনের পাশাপাশি চাকরি করে যাচ্ছি।
এই এক্সচেঞ্জের সেবা প্রদানের ধরনটাই আলাদা। কী সুন্দর আহ্বান। আমরা এখানে আপনাকে শোনার জন্যই অপেক্ষমাণ। মদিনা জায়েদ লুলু সেন্টারের সামনের শাখায় প্রবেশ করতেই এই কথাগুলো চোখের সামনে পড়বে আপনার। আমাদের সঙ্গে কথা বলুন এবং আপনাকে ভালো সেবা দেওয়ার জন্য সাহায্য করুন। লাইনটিতে চোখ বোলাতে বোলাতে আপনি একটু সামনে পা বাড়ালেন। দেখবেন সন্তোষ কুমার আপনার কাছে এগিয়ে এসেছেন। এটা এই প্রতিষ্ঠানের সাধারণ চিত্র। অন্য এক পাশে লেখা—আজকের সেবাকে মূল্যায়ন করুন। চার তরুণ ও এক তরুণীর ছবি। ঝুলন্ত বাক্সে কলম রাখা, কাগজ সাঁটানো—এ আয়োজন মন্তব্যের জন্য। গ্রাহকেরা সরাসরি তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। দেখলাম একজনের ব্যাপারে লেখা, নিখুঁত তোমার কাজ, সেবায় ভালোবাসায়, ধন্যবাদ তোমাকে। আমি দেখছি, কাছে এলেন এক তরুণ সেবী। হাত মেলালেন। আমি মুদ্রা বিনিময় কিংবা প্রেরণের জন্য আসিনি। তারপরও তাদের মনোযোগ থেকে বঞ্চিত হইনি। এরই নাম ইউএই এক্সচেঞ্জ। এইই হচ্ছে ইউএই এক্সচেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী মুদ্রা প্রেরণে এদের আছে এক্সপ্রেস মানি ব্যবস্থা। এই মাধ্যমে গ্রাহক তার প্রিয়জনকে টাকা পাঠাতে পারেন। সর্বত্র এবং স্বচ্ছন্দে। প্রিয়জনেরা নিকটস্থ ব্যাংক কিংবা এনজিও শাখা থেকে মুহূর্তেই টাকা গ্রহণ করতে পারেন। ত্বরিত এ মুদ্রা প্রেরণ ব্যবস্থা এদের এনে দিয়েছে বিশাল এক সুনাম। ইউএই এক্সচেঞ্জ ১৯৮০ থেকে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অর্থ প্রেরণ, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে এ একটি অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। আবুধাবিতে এর প্রধান কার্যালয়। সারা বিশ্বে এর পদচারণা। পাঁচটি মহাদেশের ৩১টি দেশে এরা এদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। আট শটিরও অধিক শাখার মাধ্যমে তার সুবিস্তৃত নেটওয়ার্ক নিয়ে এক্সচেঞ্জ সামনের দিকে অগ্রসরমাণ। গ্রাহকের সেবা ও সন্তুষ্টির ক্ষেত্রে সর্বদা বিশেষ নজর দেয় এই প্রতিষ্ঠান। ভাষা বা কথার যোগাযোগের প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পায় সে জন্য। ৪০ টিরও অধিক জাতির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে এর কর্মীবাহিনীকে। ৯ হাজারেরও বেশি দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে গ্রাহকদের নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে দেড় কোটি গ্রাহকের সন্তুষ্টির জন্য তারা নিবেদিত আজ। এই ফাঁকে একটি কথা না বললেই নয়। মদিনা জায়েদ শাখায় আমি কিন্তু একজনও বাঙালি কর্মী দেখিনি। যার প্রয়োজন খুবই। ইউএই এক্সচেঞ্জের প্রচেষ্টা আমার বাংলাদেশ সামাজিক অভিযানের মাধ্যমে আরও একটুখানি এগিয়ে যাওয়া। অর্থ প্রেরণ ব্যবস্থাকে হুন্ডির পথ থেকে মুক্ত করা। এই অভিযানের শুরু বিজয়ের মাসে। বাংলাদেশের মানুষ একযোগে অংশ নিয়ে একাত্তরে দেশকে শত্রু মুক্ত করেছিল। আজও তারা এক কাতারে সমবেত। মুদ্রা প্রেরণে নিরবচ্ছিন্ন একটি বাতাবরণ তৈরিতে তারা এ অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে। একাত্তরে তাদের প্রেরণা, এ কথা তাদের প্রচার পাচ্ছে পরিষ্কার। বিপুল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অধিকতর সহজ ও সাবলীলভাবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। চলমান তার এ যাত্রা। এই যাত্রায় ইউএই এক্সচেঞ্জ আরও আরও অবদান রাখবে, এই আশা নিশ্চয়ই অমূলক নয়।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.