নিয়তিই হয়তো ঠিক করে রেখেছিল এটা! সেরেনা উইলিয়ামসের ইতিহাস গড়ার মুহূর্তে পাশে থাকবেন ভেনাস উইলিয়ামস। প্রথম অভিনন্দনটা পাবেন এক বছরের বড় বোনের কাছ থেকেই। টেনিসের সর্বোচ্চ শিখরে ওঠায় যিনি তাঁর সবচেয়ে বড় প্রেরণা। খেলাটিতে তাঁর সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীও!
কাল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে ভেনাস ছিলেন নেটের ওপাশেই। এর আগের আটটি গ্র্যান্ড স্লামের ফাইনালের মতোই প্রতিপক্ষ হয়ে। আগের ছয়বারের মতো এবারও বড় বোনকে হারালেন সেরেনা। জিতলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সপ্তম শিরোপা। সেটিতেই রচিত হলো নতুন ইতিহাস। জার্মান কিংবদন্তি স্টেফি গ্রাফকে পেছনে ফেলে টেনিসের উন্মুক্ত যুগে সর্বোচ্চ ২৩টি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের রেকর্ডটিও হয়ে গেল সেরেনার। তাঁর সামনে এখন শুধুই মার্গারেট কোর্ট। টেনিসে অ্যামেচার ও পেশাদার খেলোয়াড়দের পার্থক্য ঘুচে যায় ১৯৬৮ সালে। এরপরই শুরু উন্মুক্ত যুগের। সেরেনার চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা এখন শুধু দুই যুগেই খেলা অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি কোর্টেরই আছে। সেরেনার ইতিহাস গড়ার মুহূর্তে গ্যালারিতেই ছিলেন কোর্ট। কী ভাবছিলেন তিনি? ৩৫ বছর বয়সী মেয়েটা হয়তো ফ্রেঞ্চ ওপেনেই ২৪তম শিরোপা জিতে ছুঁয়ে ফেলবেন তাঁকে। ছাড়িয়ে যাবেন উইম্বলডনে!
ছোট বোনের কাছে ৬-৪, ৬-৪ গেমে উড়ে গেছেন। কিন্তু ভেনাসের চোখেমুখে হতাশার লেশমাত্র নেই। সেরেনাকে বাঁধলেন উষ্ণ আলিঙ্গনে। দুই বোনের মুখেই তখন বিজয়ের হাসি। এটাই তো হওয়ার কথা! ম্যাচের আগে যে দুজনই বলেছিলেন—এই ম্যাচে হারবে না কেউ, জিতবে উইলিয়ামস পরিবার।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জানানো প্রতিক্রিয়ায়ও বিজয়ী আর বিজিতের কথায় তেমন পার্থক্য থাকল না। হেরেও কেন খুশি, সবাইকে তা মনে করিয়ে দেওয়া কর্তব্য মনে করলেন ভেনাস, ‘শুনুন আপনারা, সেরেনা উইলিয়ামস, ও আমার ছোট বোন।’ এরপর বোনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি জানো, তোমার জয় সব সময়ই আমারও জয়। আমি তোমাকে নিয়ে অসম্ভব গর্বিত। আমার পৃথিবী তুমি।’ বড় বোনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি সেরেনাও, ‘ও অসাধারণ একজন। ও না থাকলে আমি ২৩টি শিরোপা জিততেই পারতাম না। আমার পক্ষে যতটা সম্ভব, ততটা সেরা হতে অনুপ্রাণিত করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।’
উইলিয়ামস বোনদের খেলা দেখতে বরাবরের মতো এদিনও গ্যালারিতে ছিলেন তাঁদের মা। ম্যাচ চলাকালে বার কয়েক টিভি পর্দায় তাঁকে দেখাও গেছে। তবে পুরস্কার বিতরণীর আবেগঘন সময়টাতে ক্যামেরা তাঁর দিকে ঘোরেনি। কী করছিলেন তখন তিনি? হয়তো হাতের তালুতে মুছছিলেন চোখের কোণে চিকচিক করে ওঠা জল। আনন্দাশ্রু, উইলিয়ামস পরিবারের বিজয়ের আনন্দ!
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.