শীতের সকালে মুহূর্তেই সব আলো কেড়ে নিলেন। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে এক টুকরো হিরের মতোই আলোর ঝলক দেখিয়ে সবাইকে চমকে দিলেন হীরা মনি। আর্চারির কোনো আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম পদক জিতলেন ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে। বড় বোন আদর করে নাম রেখেছিলেন হীরা। কিন্তু কে জানত সেই হীরা এভাবে চকমক করে উঠবেন! সলিডারিটি আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ বোয়ের মেয়েদের এককের ফাইনালে কাল হীরা ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারিয়েছেন আজারবাইজানের ইয়ালাসুল রামোজামোভাকে। বিকেএসপির আর্চার হীরার অভিষেকটা হলো সোনায় মোড়ানো। ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক পদক, সেটাও আবার সোনা! হীরার আনন্দ তাই ধরে না, ‘আমার খুবই ভালো লাগছে। দেশের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি, এতেই বেশি খুশি।’ ফাইনালে ওঠার পর একদিন বিরতি ছিল হীরার খেলায়। তবে একেবারেই চাপ টেনে আনেননি নিজের ওপর, ‘আমি কোনো চাপ নিতে চাইনি। বড় আপুরা, কোচ—সবাই আমাকে বুঝিয়েছেন যেন হাল ছেড়ে না দিই। সবাই বলেছেন, এত দূর এসেছ, তোমাকে ভালো খেলতেই হবে। সোনা জিততেই হবে।’ ঢাকায় আগামী নভেম্বরে হবে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ। এই সোনার পদকটি সেই টুর্নামেন্টের জন্য হীরাকে জোগাচ্ছে আত্মবিশ্বাস, ‘ঢাকায় যে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ হবে, সেটার একটা রিহার্সাল বলা যায় এই প্রতিযোগিতা। আগামী নভেম্বরেও ভালো করার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী।’ হীরা ২০১০ সালে বিকেএসপিতে আর্চারিতে সুযোগ পান। এরপর ২০১৩ সালের বাংলাদেশ গেমসে মিশ্র দলগত রিকার্ভ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জেতেন। গত বছর জাতীয় প্রতিযোগিতায় দলগত সোনা জিতেছিলেন। তবে এবারই প্রথম ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতলেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো অংশ নিলেন। এর আগে দুবার অংশ নিয়েছেন এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে। খেলেছেন এসএ গেমস ও বিশ্বকাপ বাছাইয়ে। কিন্তু কোনো টুর্নামেন্টেই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। এবার দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হবে শুনে বাড়তি অনুশীলন করেছেন। যোগ-ব্যায়াম, মেডিটেশনও নিয়মিতই করেন আর্চারিতে যোগ দেওয়ার পর। এসব মিলিয়েই স্বপ্ন সত্যি হয়ে ধরা দিল হীরার কাছে। ২০১০ সালে বিকেএসপির পথ চিনিয়েছিলেন চাচাতো ভাই মির্জা কাউসার। বিকেএসপির সাবেক ক্রিকেটার কাউসারের পরামর্শে আর্চারিতে ভর্তি হন হীরা। পরিবারের চার বোনের মধ্যে তৃতীয় হীরার খেলাধুলা নিয়ে এলাকার কেউ কখনোই প্রশ্ন তোলেননি। এখন বরং বাড়িতে গেলে সবাই কৌতূহল নিয়ে জানতে চান, ‘বুবু, এটা কেমন খেলা?’ তির-ধনুকের খেলার নিয়মকানুন হাসিমুখে তিনি সবাইকে বুঝিয়ে দেন। ভারতে গত এসএ গেমসে নিজের ইভেন্টে এলিমিনেশন রাউন্ডে বাদ পড়েছিলেন। তাই বলে হতাশ হননি, ‘গত গেমসটা বাজে গেছে। কিন্তু আমার স্বপ্ন এসএ গেমসে একদিন সোনা জিতব। অলিম্পিকে খেলতে যাব।’ সবে শুরু হলো হীরার স্বপ্নযাত্রা। এখন যেতে হবে আরও দূরে…।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.