ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ইট-পাথর উঠে বড় বড় গর্ত ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহন প্রতিনিয়ত এসব গর্তে পড়ছে। প্রায়ই উল্টে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। কিন্তু সড়কটি সংস্কার করছে না ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এই মহাসড়ক দখল করে অবৈধভাবে বসছে তিন শতাধিক মাছের দোকান। এই এলাকায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচেও বসে অর্ধশতাধিক মাছ ও বরফের দোকান। এসব দোকানের পানি জমছে সড়কের গর্তে। পুরো সড়ক সয়লাব হয়ে আছে আঁশটে দুর্গন্ধে ভরা পানিতে। এতে সড়কে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশও দূষিত হচ্ছে৷ পথচারী ও যাত্রীদের অভিযোগ, প্রায় এক বছর ধরে এই সড়কের গর্তে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কার না করায় দিনে দিনে গর্তের আয়তন, গভীরতাও বাড়ছে। ছোট যানবাহন গর্তে পড়ে প্রায়ই উল্টে যায়। ইদানীং এতে ভারী যানবাহন পড়েও উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের নিচে মাছের পানি ও রক্তের দুর্গন্ধে এই পথে চলা দায়। অবিলম্বে সড়ক সংস্কার ও মাছের দোকান উচ্ছেদের দাবি এলাকাবাসীর। এলাকাটি ডিএসসিসির অঞ্চল-৫-এর ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। জানতে চাইলে ডিএসসিসির অঞ্চল-৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, এই মহাসড়কসহ এলাকার তিনটি সড়ক সংস্কারে দরপত্র চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই সংস্কারকাজ শুরু হবে। গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই লেনে ইট-পাথর উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার ও মাছের আড়ত এলাকায় সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। এই এলাকায় সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন চলছে হেলেদুলে। আর কোনো যানবাহন দ্রুতগতিতে চললে কাদা-পানি পথচারীদের গায়ে গিয়ে পড়ছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থানার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে সড়কের দুপাশে মাছ বিক্রি করছেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। দরদাম করে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। মাছবাজারের ময়লা-আবর্জনায় সড়কের দুপাশের পয়োনালা বন্ধ হয়ে আছে। মানুষের চাপে সড়কের উভয় পাশে লেগে আছে যানজট। ফ্লাইওভারের নিচে খালি জায়গায় রয়েছে বরফ ও মাছ কাটার দোকান। এ কারণে পুরো এলাকার বাতাসে মাছ ও মাছের রক্তের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে রয়েছে। নাক-মুখ চেপে চলাচল করছে পথচারীরা। যাত্রাবাড়ী থেকে রিকশায় করে শনির আখড়ায় যাচ্ছিলেন মাহবুবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী। মাহবুবুর বলেন, গর্তে ভরা সড়কে জলাবদ্ধতা দেখলেই মনে ভয় লাগে, কখন রিকশা উল্টে যায়! নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার্থে অবিলম্বে সড়কটি সংস্কার করা দরকার। পাশাপাশি সড়কের ওপর থেকে মাছের আড়ত ও ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মাছ কাটার দোকানগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। ওই মাছের আড়তের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন হায়দার আলী। তিনি বলেন, মাছের আড়ত এলাকায় সড়কের দুপাশের নালাগুলো আবর্জনায় ভরে গেছে। এতে মাছের পানিতেই এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া ফ্লাইওভারের নিচে মাছ কাটায় রক্তের দুর্গন্ধে চলাচল করা দায়। ফ্লাইওভারের নিচে বসে রুই মাছ কাটছিলেন নিজামউদ্দিন। তিনি বলেন, ক্রেতারা আড়ত থেকে মাছ কিনে তাঁদের দিয়ে কাটিয়ে নেন। কাজ শেষে তাঁরা নিজেরাই মাছের বর্জ্য পরিষ্কার করেন। তবে রক্ত ও পানি রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মৎস্য আড়তের মালিক বলেন, আড়তের ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ব্যবসায়ীরা সড়কের ওপর মাছ বিক্রি করেন৷ বাইরের ব্যবসায়ীরাও এখানে দোকান বসান। এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, যাত্রাবাড়ী মাছের আড়ত ও কাঁচাবাজার এলাকায় পয়োনিষ্কাশন লাইনের কাজ চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে এই এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকবে না। মেয়রের নির্দেশনা পেলে সড়ক থেকে ওই মাছ ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হবে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.