বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের চেয়ে মূল্যবান কি আরো কিছু আছে? এককথায় না৷ এ সম্পর্ক খারাপ হলে পরিবারে নানা জটিলতা আর অশান্তির সৃষ্টি হয়৷ সম্পর্ক সুন্দর রাখার কিছু সহজ উপায় থাকছে এই ছবিঘরে৷ মায়ের সাথে সম্পর্ক ছোটবেলায় শিশুরা বেশিরভাগ সময় যে মায়ের সাথেই থাকে – এ কথা ঠিক৷ তাই বলে যে মায়ের সাথে পরেও সম্পর্ক ভালো থাকবে এমন কোনো কথা নেই কিন্তু! সব সময় সম্পর্ক ভালো এবং সুন্দর সম্পর্ক রাখার জন্য অবশ্যই সে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে আর সেটা করতে হবে ছোটবেলা থেকেই৷ কিন্তু কিভাবে? সম্পর্ক তৈরি দায়িত্ব পালন এক বিষয়, আর বন্ধুত্বের সম্পর্ক সম্পূর্ণ অন্য একটা বিষয়৷ ছোটবেলা থেকেই শিশুর সাথে খেলাধুলা করুন, বই পড়ুন৷ শিশুর সাথে বসে টিভিতে শিশুদের অনুষ্ঠান দেখুন৷ শিশুকে অন্য শিশুর সাথে মিশতে, খেলতে দিন৷ এতেই বোঝা যাবে আপনার শিশুর পছন্দ, অপছন্দ, ভালো লাগা আর না লাগার কথা৷ শিশুর পছন্দকে গুরুত্ব দিন তবে ওর পছন্দই যেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব না পায়৷ বাবার দায়িত্ব সময়ের দাবির কারণে কিছুটা পরিবর্তন এলেও এখনো দেখা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সন্তানরা বেশিরভাগই মায়ের সাথে যতটা সহজ, বাবার সাথে তেমনটা নয়৷ তাই বাবাও সন্তানের জন্য কিছুটা সময় বের করে সন্তানের সাথে থাকুন৷ জার্মানিতে অনেক বাবাকেই দেখা যায় ছুটির দিনে সন্তানকে নিয়ে পার্কে, মিউজিয়ামে বা অন্য কোথাও ঘুরতে যেতে৷ এর মাধ্যমে বাবার সাথে সন্তানের গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠতা৷ সমান দায়িত্ব সন্তানদের সাথে ভালো এবং মধুর সম্পর্ক গড়া মা-বাবার সমান দায়িত্ব তাই দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে সব বিষয়ে কথা বলুন৷ এতে ছেলে-মেয়েরা সহজ হয়ে ওদের দুঃখ, কষ্ট ও সমস্যার কথা জানাতে দ্বিধা করবে না৷ শিশুদের ভয় দেখিয়ে কখনো কাছে আনা যায় না৷ওরা কোনো অপরাধ করলে তা নিয়ে সরসরি আলোচনা করতে হবে৷ ছোটবেলায় সন্তনকে ভয় দেখিয়ে কাজ হলেও, বড় বয়সে কিন্তু আর সে সম্পর্ক সুন্দর থাকে না৷ তাই সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে হবে৷ সম্পর্কে দূরত্ব আনে প্রযুক্তির ব্যবহার আজকাল প্রায়ই দেখা যায় একদিকে মা, একদিকে বাবা, আর অন্যদিকে সন্তান – যে যার মতো ব্যস্ত ফেসবুক, কম্পিউটার বা ট্যাবলেট নিয়ে৷ অর্থাৎ পরিবারের সদস্যদের ভেতর কথাবার্তা তেমন হচ্ছে না৷ তাই প্রয়োজন ছাড়া এই যন্ত্রগুলোকে সরিয়ে রেখে দিয়ে নিজেদের মধ্যে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন শিশু-কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ গুন্ডুলা গ্যোবেল৷ সন্তানের সামনে ঝগড়া নয়! বাবা-মায়ের নিয়মিত ঝগড়া সন্তানদের মনে ভীষণভাবে রেখাপাত করে, যা বড় বয়সেও তারা ভুলতে পারে না৷ শুধু তাই নয়, যারা খুব বেশি ঝগড়া করেন, তাঁদের অকালমৃত্যুর ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি৷ এই তথ্য পাওয়া গেছে ডেনমার্কের কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের করা এক গবেষণার ফল থেকে৷ তাছাড়া বাবা-মা সারাক্ষণ ঝগড়া করলে সন্তানরা বিষণ্ণতায় ভোগে, যা পরবর্তিতে তাদের ভেতরে থেকে যায়৷ আলোচনার বিকল্প নেই পরিবারের সুখ-শান্তি রক্ষায় আলোচনার কোনো বিকল্প নেই৷ তাই শিশুকে শিশু না ভেবে একজন সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে গণ্য করে আলোচনায় ওকেও অংশ নিতে নিন৷ শিশুর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং ওকে বলার সুযোগ দিন৷ এর মধ্য দিয়ে আপনার সন্তানটিও বুঝবে যে সে পরিবারের একজন সদস্য এবং ওর মতামতেরও মূল্য আছে৷ এতে শিশুর দায়িত্ববোধ এবং অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাও বাড়বে, বলেন বিশেষজ্ঞরা৷ বকা বা ভয় দেখাবেন না! আজকের যুগের জীবনযাত্রা মোটেই সহজ নয়, কিন্তু তারপরও মা-বাবা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের চাপ সন্তানদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না৷ কারণ শিশুদের মন খুবই নরম, ওরা সব বাবা-মায়ের সব কথার উত্তর না দিলেও তা ওদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ভেলে, খুব সহজেই৷ দৈনন্দিন সমস্যার কথাও সন্তানদের সাথে শেয়ার করুন৷ হয়ত ওদের কাছে থেকেই পেয়ে যাবেন সমস্যার সমাধান৷বকাঝকা করে বা ভয় দেখিয়ে সন্তানদের কাছে আনা যায় না৷ স্বপ্ন আর বাস্তব – এক নয়! প্রতিটি বাবা-মা চান তাঁদের সন্তান সব কিছুতেই ভালো করুক, যা খুবই স্বাভাবিক৷ তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, স্বপ্ন আর বাস্তব – এক নয়৷ তাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফল হয়নি বা অন্য কোনো প্রতিযোগিতায় মনের মতো সাফল্য দেখাতে পারেনি বলে তাকে বকাঝকা না করে বরং আরও একটু বেশি যত্ন নিন, সাহস দিন আগামীবারের জন্য৷ তাছাড়া পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, কখনোই! অনুভূতির আদান-প্রদান সন্তান এবং বাবা-মায়ের ভেতর এমন সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে যেন, একে-অপরকে নির্দ্বিধায় সব কথা বলতে এবং বুঝতে পারা যায়৷
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.