নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কল্যান্দী এলাকার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে এবার বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির পাঠানো চিঠিটি পেয়েছেন শ্যামল কান্তি ভক্ত। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ আনা হয়। চিঠিতে বলা হয়, এসব ‘অবৈধ’ কাজ তিনি আগেও করেছেন এবং বহুবার সতর্ক করা হয়েছে।
ওই চিঠির প্রথম অনুলিপি পাঠানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে।
শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে আনা চারটি অভিযোগ হচ্ছে, ছাত্রদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে অর্থ সংগ্রহ, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি, বিদ্যালয়ে ছুটি ছাড়া অনুপস্থিত থাকা এবং দেরি করে বিদ্যালয়ে আসা।
প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আহত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত গতকাল সোমবার এনটিভি অনলাইনের কাছে দাবি করেন, পুরো ঘটনাটিই ছিল সাজানো নাটক। ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে এক ছাত্রকে দিয়ে বলিয়ে তার ওপর মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি দাবি করেন,ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের কটাক্ষ তিনি করেননি।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ধর্মীয় আঘাতের কথা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মতিউর রহমান মিজুর সাজানো নাটক। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং প্রাণে নিঃশেষ করার জন্য তারা এটা করেছে।’
শিক্ষক শ্যামল কান্তি আরো বলেন, ‘আমি আজ ১৭ –১৮ বছর ধরে এই স্কুলে আছি। টিনশেড এবং একেবারে জলাবদ্ধ ভূমি থেকে শুরু করে স্কুলকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসছি। এখন তো স্কুল বেশ চোখে পড়ে, তাই হয়তো তাদের ম্যানেজিং কমিটির) লোভ বা লালসা সৃষ্টি হইছে।’)
গত ১৩ মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্কুলের সামনের একটি মসজিদ থেকে হঠাৎ করেই মাইকে ঘোষণা করা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন এবং সেখান থেকে এলাকাবাসীকে স্কুল মাঠে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে স্কুলে ঢোকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁরা স্কুলের দরজা ভেঙে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে এবং তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। সংসদ সদস্য উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করার শাস্তি দেন।
কান ধরে ওঠবসের পর সমবেত জনতার কাছে করজোড়ে মাফ চাইতেও বাধ্য করা হয় ওই প্রধান শিক্ষককে। পরে সংসদ সদস্যের নির্দেশে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হেফাজতে স্কুল থেকে বের করা হয়। এরপর পুলিশ চিকিৎসার জন্য তাঁকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.