দুই বছর আগের সেই দুঃসহ যন্ত্রণা আজো তাড়া করে ফেরে আতলেতিকো মাদ্রিদকে। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে প্রথমে গোল করে শিরোপা প্রায় জিতেই গিয়েছিল তারা। কিন্তু লিসবনে ডিয়েগো সিমিওনের শিষ্যদের ট্রফি হাতে নেওয়া হয়নি। শেষ মুহূর্তে গোল করে সমতা নিয়ে আসা রিয়াল অতিরিক্ত সময়ে আরো তিন গোল করে মেতে উঠেছিল ‘লা দেসিমা’ বা দশম শিরোপা জয়ের আনন্দে। আজ রাতে আবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে মুখোমুখি দুই মাদ্রিদ। মিলানের বিখ্যাত স্টেডিয়াম সানসিরোতে তাই আতলেতিকোর সামনে প্রতিশোধের মিশন। অন্যদিকে রিয়ালের সামনে নিজেদের রেকর্ডকে আরো উন্নত করার হাতছানি।
ফাইনালের আগে ইতিহাসের সফলতম দল দুশ্চিন্তায় পড়তে পারত ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে। গত মঙ্গলবার প্র্যাকটিসের সময় এক সতীর্থর সঙ্গে ধাক্কা লেগে বাঁ উরুতে ব্যথা পেয়েছিলেন তিনবারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলার। তবে রিয়াল মাদ্রিদের সৌভাগ্য, দলের সেরা তারকার চোট তেমন গুরুতর নয়। ভক্তদের আশ্বস্ত করে স্পেনের টেলিভিশন চ্যানেল লা সেক্সতাকে রোনালদো বলেছেন, ‘ক্রিস্টিয়ানো সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জ্বলে ওঠে। আমি শতভাগ ঢেলে দেব। লিসবনের চেয়ে শনিবার ভালো ফর্মে থাকব আমি।’
লিসবনে দুই বছর আগের ফাইনালে রিয়ালের ৪-১ গোলের জয়ে শেষ গোলটি এসেছিল রোনালদোর পেনাল্টি থেকে। সেদিন পায়ের ব্যথা অগ্রাহ্য করে পুরো ম্যাচ খেলেছিলেন পর্তুগিজ তারকা। সেই কষ্টের কথা আজো তিনি ভুলতে পারেননি, ‘লিসবনে আমার হ্যামস্ট্রিংয়ে ভীষণ ব্যথা ছিল। বেশ খারাপ অবস্থা ছিল আমার। ব্যাপারটা ভীষণ কষ্টদায়ক। কারণ আপনি জানেন যে কিছু কিছু মুহূর্তে আরো বেশি দিতে পারবেন। কিন্তু শরীর সাড়া না দেওয়ায় আপনি তা পারছেন না।’ দু বছর আগের তুলনায় এবার রোনালদোর অবস্থা অনেক ভালো। রিয়াল-ভক্তরা তাই আশাবাদী হতেই পারেন।
রিয়ালের মতো রোনালদোর সামনেও নিজের রেকর্ড উন্নত করার সম্ভাবনা। ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১৭টি গোল করে রিয়ালের দশম শিরোপা জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তাঁর। চ্যাম্পিয়নস লিগের এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড আবারো ভেঙে দিতে পারেন রোনালদো। সেজন্য আজ তাঁর দুই গোল চাই। সেটা না হলেও ১৬ গোল করা রোনালদোর আরেকবার চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া নিশ্চিত।
তবে রিয়াল মাদ্রিদের শঙ্কিত হওয়ার মতো তথ্যও আছে যথেষ্ট। শঙ্কার বড় কারণ তাদের প্রতিপক্ষ আতলেতিকো মাদ্রিদ। লিসবনের ওই ফাইনালের পর ১০টি মাদ্রিদ-ডার্বি হয়েছে এ যাবত। এই ১০ ম্যাচের পাঁচটিতেই জিতেছে আতলেতিকো। রিয়াল মাদ্রিদের জয় মাত্র একটি। আজকের ফাইনালের ভেন্যুও যেন রিয়ালের জন্য ‘বধ্যভূমি’। এর আগে সানসিরোতে ১৩টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেললেও কোনোবারই জয়ের হাসি হাসতে পারেনি স্পেনের সফলতম দলটি।
আতলেতিকোর তাই উজ্জীবিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তা ছাড়া প্রতিশোধের ব্যাপার তো আছেই। কোচ সিমিওনে অবশ্য ‘প্রতিশোধ’ শব্দটা মাথায় আনতেই চাইছেন না, ‘জীবনে প্রতিশোধ বলে কোনো ব্যাপার নেই। শুধু নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি আছে। আর এটা আমাদের জন্য নতুন সুযোগ।’
সত্যিই দারুণ সুযোগ সিমিওনে আর তাঁর দলের সামনে। আর্জেন্টাইন কোচের অধীনে গত পাঁচ বছরে লা লিগা, স্প্যানিশ সুপার কাপ, কোপা দেল রে, ইউরোপা লিগ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপের শিরোপা জিতেছে আতলেতিকো। বাকি আছে শুধু চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি। সিমিওনের শিষ্যরা অবশেষে ইউরোপ-সেরা হতে পারবে, নাকি রিয়াল মাদ্রিদ ‘উনদেসিমো’ বা একাদশ শিরোপা জিতবে, তা জানা যাবে আজ রাতেই।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.