প্রেমের টানে ঘর ছেড়েছেন, হয়েছেন ধর্মান্তরিত। কিন্তু যাকে ভালোবেসে এত কিছু করা, সেই মানুষটিই পদে পদে প্রতারণা করেছেন। পাঁচ বছরের সংসারে সহ্য করেছেন নির্মম নির্যাতন।
বলছি কুমিল্লার এক তরুণীর কথা। ২২ বছর বয়সী হিন্দুধর্মাবলম্বী এই তরুণী ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন চান্দিনার দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নের কৈকরই গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)সদস্য আবদুল মমিন সরকারের ছেলে মো. জালাল উদ্দিনকে।
ওই তরুণী জানান, তিনি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার চিতড্ডা ইউনিয়নের ওড্ডা গ্রামের মেয়ে। মুঠোফোনে রং নম্বরে জালালের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর।
একপর্যায়ে পাঁচ বছর আগে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন জালালকে। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন অজুহাতে জালাল তাঁকে মারধর করেন।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জালালের স্ত্রী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার মাকে দেখার জন্য বাপের বাড়ি যাই। সেখান থেকে জানতে পারি আমার স্বামী জালাল চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি আসছেন। তাই আমিও ওখান থেকে ৩১ জুলাইসকাল ১০টার দিকে স্বামীর বাড়িতে চলে আসি। এসে দেখি আমার স্বামী আমার আগে বাড়িতে চলে এসেছেন।’
‘আমি আসার পর আমার স্বামী আমাকে ঘরের এক কক্ষে নিয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার অজুহাতে হাত-পা বেঁধে রড, টর্চ লাইট ও চৌকির পায়া দিয়ে পেটাতে থাকেন এবং ব্লেড দিয়ে মাথার চুল কেটে দেন। এমনকি আমার বাম পা-ও ভেঙে দেন। খবর পেয়ে আমার ভাই এসে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানালে চেয়ারম্যান এসে আমাকে দেখে যান এবং সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন।’
নির্যাতনের শিকার তরুণী বলেন, ‘বিয়ের পর জানতে পারি আমার স্বামী জালাল আগে একটি বিয়ে করেছিলেন এবং রাব্বী (১০) ও রিনি (৮) নামে তার দুটি সন্তানও রয়েছে। তার আগের স্ত্রীকে নির্যাতন করলে অসুস্থ হয়ে মারা যায় সে।’
জালালের বাবা আবদুল মমিন সরকার পুত্রবধূর ওপর নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে এবং ছেলের বউ কেউ আমার কথা শোনে না।’
প্রতিবেশী আমেনা বলেন, ‘আমরা চিল্লাচিল্লি, চিক্কুর হুইন্না আইছি। হের শাশুড়িসহ আমরা দরজা বাইরাতাছি, হে দরজা খোলে না। মারার শেষে দরজা খুইল্লা দেয়, পরে বেলেট আইন্না চুল-মুল কাইট্টা দেয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোল্লাই নবাবপুর ইউপির চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ইউপি মেম্বার ও চৌকিদার নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান এবং নির্যাতনের শিকার মেয়েটির কথা শুনেন। এ সময় তিনি মেয়েটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান।
এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ ঘটনা সম্পর্কে আমার জানা নাই, কেউ এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগও করেনি।’