সিঙ্গাপুরে হলি উৎসব পালন করছেন তরুণীরা
দুইদিন আগিই স্পেনে হয়ে গোলো টমেটো উৎসব। টমেটো নিয়ে সে কি খেলা। অন্তত ১০০ মেট্রিক টন টমেটো রাস্তায় রাস্তায় গড়াগড়ি খায় এই উৎসবে। হাজার হাজার মানুষ এই উৎসবে অন্যরকম এক আনন্দে মেতে ওঠে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম উৎসব হয়ে থাকে। কোথাও কাদা নিয়ে উৎসব, কোথাও রং নিয়ে উৎসবে মাতে মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা দশ উৎসব নিয়ে এই আলোচনা।
১. রিও ডি জেনিরো উৎসব: বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব ব্রাজিলের এই রিও ডি জেনিরো কার্নিভাল। রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই উদ্দাম উৎসব। রিও ডি জেনিরো মূল উৎসব হলেও ব্রাজিলের প্রতিটি শহর ও গ্রাম এই উৎসবে মেতে ওঠে। পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাথলিক শহরেও এই উৎসব হয়ে থাকলেও রিও ডি জেনিরোকে এই উৎসবের রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ১৮২৩ সাল থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব উপলক্ষে রিওতে অনুষ্ঠিত সাম্বা স্কুলগুলো উৎসবকে রাঙিয়ে তোলার কাজ করে। উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন অন্তত ২০ লাখ লোক রাস্তায় নামে। এই উৎসবে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে প্রতি বছর পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ব্রাজিলে হাজির হয়। বিদেশিদের অংশ নেওয়া এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎসব।
২. চীনা নববর্ষ: বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করা হয়। পুরানো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিশ্বব্যাপী উৎসব প্রিয় মানুষগুলো উৎসবে মেতে ওঠে। তবে নববর্ষ উপলক্ষে চীনা নববর্ষ সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ পোশাক, আতশবাঁজি, ড্রাগন, ফুল নিয়ে এই জমকালো উৎসবে মেতে ওঠে চীনারা। তবে অন্য দেশের তুলনায় একটি ব্যতিক্রম যে, বছরের প্রথম দিনে নয়, বছরের প্রথম মাসের ১৫তম দিয়ে এই উৎসব করে তারা। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে চীনারা তাদের ঘরদোর পরিস্কার করে, লাল পোস্টারে ঘরের দরজা সজ্জিত করে এবং সেখানে কবিতাও লিখে রাখে। এটা চীনা পরিবারের জন্য একটা পুনর্মিলনের উৎসবও বটে। কেননা দেশের বাইরে থাকা স্বজনরা এই উৎসব উপলক্ষে পরিবারে কাছে ফিরে আসে।
৩. বোরিয়ং কাঁদা উৎসব: দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের ২০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বোরিয়ং অঞ্চলে এই অদ্ভূত উৎসব। ২০ লাখের বেশি মানুষ এই উৎসবে শামিল হয়। তবে গত বছর অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা সবাইকে চমকে দিয়ে ৩২ লাখে পৌঁছেছিল। খুব বেশিদিন হয়নি, মাত্র ১৯৮৮ সালে এই উৎসবের শুরু হলেও এরই মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে উৎসবটি। বোরিয়ংয়ের মাটি থেকে তৈরি কসমেটিক্সের পরিচয় করিয়ে দিতেই এই উৎসবের শুরু। খুব সাদামাটা ভাবে শুরু হয় উৎসবটি কিন্তু যখন শেষ হয় তখন তা আর মোটেও সাদামাটা থাকে না। অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে অতি পরিজনকেও চেনার উপায় থাকে না। কাদা মাটিতে স্লিপ খাওয়া, মুখে মাখানো, কাদার ভেতর কুস্তি করা, কাদার পুকুরে গোসল করা এমন সব কসরতে মেতে ওঠে উৎসবকারীরা।
৪. বার্নিং ম্যান: যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা শহরের এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণকারীর সংখ্যা যে খুব বেশি তা নয়, তবে নামী মানুষেরা এই বার্নি ম্যান অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে থাকে। উৎসবটি মোটেও সহজ কোনো কিছু নয়। সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার থেকে শুরু হয়ে পরের মাসের প্রথম সোমবার পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। গত বছর ৭০ হাজার লোক এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে আগুন নিয়ে বিভিন্ন খেলা প্রদর্শিত হয়ে থাকে। তবে ভয়ঙ্কর ব্যাপার যে, এই খেলার সময় প্রতিদ্বদ্বিদের কাছে কোনো পানি বা অগ্নি নির্বাপক কোনো পাউডারও থাকে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারীদের জন্য যথেষ্ট আনন্দ উপভোগের ব্যবস্থা থাকে । যেমন বিনামূল্যে শরীর ম্যাসাজ, কোলাকুলি, নগ্নতা, বিয়ে উৎসব ইত্যাদি।
৫. লা টোমাটিনা বা টমেটো উৎসব: অন্য রকম এক উৎসব বটে এই লা টোমাটিনা। প্রত্যেক বছর আগষ্টের শেষ বুধবার স্পেনের বুনল শহরে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। টমেটো ছোঁড়াছুড়ির এই খেলায় টমেটোর বৃষ্টি ছাড়িয়ে তা বন্যায় রূপ নেয়। উৎসবের জন্য এক দুই মন নয় ১০০ মেট্রিক টন টমেটো রাস্তায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় টমেটো নিয়ে মারামারি। সাবান মাখানো একটা খুঁটির মাথায় শুকুরের ঝলসানো মাংস রাখা হয়, আর সেটি নেওয়ার জন্য শুরু হয় লড়াই। মাংস নেওয়ার জন্য অনেকে খুঁটিতে উঠতে চায় কিন্তু দর্শনার্থীরা তাদের ব্যালকনি থেকে পানি ছুঁড়ে তাকে খুঁটিতে উঠতে বাধা দেয়। তবে আস্ত টমেটো ছোঁড়া যাবে না, ছোঁড়ার আগে টমেটো ফাটিয়ে নিতে হবে যেনো কেউ আঘাত না পায়। বর্তমানে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যায় সীমানা টেনে দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের আগে ৪০ হাজার মানুষকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দিলেও পরের বছর থেকে কমিয়ে ২০ হাজার করা হয়েছে।
৬. সংক্রান: নতুন বর্ষ উপলক্ষে থাইল্যান্ডে এই অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। আবহাওয়া অনুযায়ী এই সময়টা থাইল্যান্ডের সবচেয়ে গরম সময়। এ কারণে অনুষ্ঠানের মূল উপাদান হচ্ছে পানি। পানি ছুঁড়ে একজনকে অপরজনকে ভিজিয়ে দেয় আর যে যত বেশি ভেজে সে নিজেকে তত বেশি পূণ্যবান মনে করে। তবে শুরুতে সুগন্ধিযুক্ত পানি ব্যবহার করা হতো, কেননা এই পানিতে তারা পাপ মুছে নিজেদের শুদ্ধি করতো। তবে সময়ের পরিক্রমায় এটার পরিবর্তন হয়েছে, এখন আর হাতে নয়, হোসপাইপ, বালতি, পানি কামান ব্যবহার করে থাকে তারা।
৭. এনসিয়েরো: স্পেনে হয়ে থাকে এ উৎসব। আর স্পেনের উৎসব ষাঁড় না থাকলে কি জমে। এই উৎসবে এক দল ষাঁড়ের সামনে দৌড়াতে থাকে মানুষজন। প্রায় এক ডজন ষাঁড় অংশ নিয়ে থাকে এই উৎসবে। ষাঁড়গুলো মানুষকে তাড়া করে। আর অতি উৎসাহে মানুষগুলো দৌড়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। কিন্তু সবার চেষ্টা সফল হয় না। প্রতি বছর ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ আহত হয়। কিন্তু এতে তাদের উৎসাহ কমে না। বরং পরের বছর আরো বেশি উৎসাহ নিয়ে এই উৎসবে যোগ দেয় তারা। তবে সৌভাগ্যের ব্যাপার যে যারা আহত হয় তা যে খুব বেশি মারাত্মক হয় তা নয়।
৮. হোলি: ভারতে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিন বা মার্চের প্রথম দিনে ভারতয়ি হিন্দুরা হোলি খেলায় মেতে ওঠে। সর্বত্র শুরু হয় রঙের ছড়াছড়ি। কেউ গুড়া রং বা কেউ রং গোলানো পানি নিয়ে একে অপরের প্রতি ভিজিয়ে বা রাঙিয়ে দিতে চেষ্টা করে। রঙে ভিজে অবস্থা এমন হয় যে, কাপড় আর কাপড় থাকে না আর অতি পরিজনকেও চেনার উপায় থাকে না। শুধু যে, অংশগ্রহণকারীরাই রংয়ে ভেজে তা নয়, শিশুরা খেলনা পিস্তলের সাহায্য রংয়ের পানিতে পথচারীদের ভিজিয়ে দেয়। যেহেতু এটা উৎসব আর তাই তারা এটা আনন্দের সঙ্গে মেনে নেয়।
৯. পূর্ণ চন্দ্র পার্টি: পূর্ণিমার আগে বা পরের দিনে থাইল্যান্ডে এই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। হাড রিন এই পার্টির মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই উৎসবে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ সমুদ্রতটে ক্লাব ও বারে আনন্দে মেতে ওঠে। অ্যালকোহল পান করে তারা উদ্দাম নাচে মেতে ওঠে। যদি কেউ উৎসব প্রিয় হয় তাহলে এই উৎসবে অন্তত একবার অংশ নেওয়া উচিত।
১০.অক্টোবারফেস্ট: জার্মানি মিউনিখে অনুষ্ঠিত হয় এই অনুষ্ঠান। সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মোট ১৬ দিনে এই অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে জার্মানি মানুষ হাজির হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে অনুষ্ঠানটি শুধু মাত্র বিয়ার কেন্দ্রিক। বড় বড় গøাসে বিয়ার সরবরাহ করা হয়। বিনা মূল্যে এই বিয়ার পানের ব্যবস্থা আছে, ব্যবস্থা আছে অন্যের সঙ্গে বিয়ার ভাগাভাগি করার। অন্যের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত, একত্রে গল্প করতে, বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ফুর্তির জন্য এই উৎসবে যোগ দেয় মানুষ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.