২০০৭ সালে অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকলের (ভিওআইপি) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে নরওয়ের নাগরিক এরিক অসের বিরুদ্ধে। তখন তিনি দেশের বেসরকারি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী (সিইও)। বর্তমানে এরিক অস দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী (সিইও)।
স্পর্শকাতর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া এরিক অসের শীর্ষ পদে থাকাকে অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে মত দিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মতে, এমন বাস্তবতায় বাংলালিংকে যেন অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ড চলতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখবে তারা।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিটিআরসি অবৈধ ভিওআইপি বিরোধী অভিযান শুরু করে। এ সময় অন্যান্য অপারেটরের সঙ্গে গ্রামীণফোন সরকারকে প্রশাসনিক জরিমানা দিয়ে অভিযোগ থেকে খালাস পায়। সেই সঙ্গে অবৈধ ভিওআইপির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পান মামলায় অন্যদের সঙ্গে অভিযোগ আনা বর্তমানে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা এরিক অস। ওই সময়ে এরিক ছিলেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে।
ভিওআইপির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তির দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ছয় বছরের মাথায় যুক্ত হন বাংলালিংকের সঙ্গে। যোগদানের পর থেকেই বাংলালিংকে বেতন বৈষম্য, শ্রমিক নির্যাতনের আর চরম অসন্তোষের খবর স্থান পায় গণমাধ্যমে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিআইবির পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, অবৈধ ভিওআইপির মতো অভিযোগ থেকে জরিমানা দিয়ে অব্যাহতি পাওয়া ব্যক্তিকে, আরেকটি অপারেটরের শীর্ষ পদে দায়িত্ব দেওয়াকে নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অপরাধ প্রমাণিত, অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত, মুচলেকা দিয়ে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁকে দ্বিতীয় দফা এ রকম কোনো শীর্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া আমি মনে করি অনৈতিক। এ রকম কাজে জড়িত ব্যক্তিদের একটা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে দেওয়া থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।’
ইফতেখারুজ্জামান আরো বলেন, ‘যেকোনো পদে শীর্ষে যারা থাকেন তাদের নৈতিকতা নিয়ে যদি প্রশ্ন থাকে, দৃষ্টান্ত থাকে এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে একদিক দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা ধুলিস্মাৎ হয়, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান থেকেই অনিয়মটা একটা চর্চা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।’
এদিকে ব্যক্তি নয়, বরং ব্যক্তির কারণে প্রতিষ্ঠানে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড উৎসাহিত হচ্ছে কি না, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার কথা জানিয়েছেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদ।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের নজর ওই লোকটার ওপর নয়, বাংলালিংকের ওপর। আমি কিন্তু প্রতিদিনই পর্যবেক্ষণ করছি।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলালিংক সরাসরি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, ইমেইলে পাঠানো উত্তরে জানিয়েছে, ভিওআইপি ইস্যুটি ২০০৬-০৭ সালের এবং অন্য অপারেটরের। তবে এর প্রভাব গোটা প্রতিষ্ঠানে পড়বে কি না, তার সুস্পষ্ট উত্তর ইমেইলে জানায়নি বাংলালিংকের করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগ।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.