আয়শা লস্কর ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (সিএসই) পড়ার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু পরীক্ষাটা আশানুরূপ হয়নি। মেধাতালিকায় পিছিয়ে পড়েন। পরে ভর্তি হন পদার্থবিজ্ঞানে। অন্যদিকে কামরুল হাসান সব সময়ই ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় পদার্থবিজ্ঞান ছিল প্রিয় বিষয়। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেধাতালিকার প্রথম দিকে থাকায় সেই সুযোগও ছিল। কিন্তু বাদ সাধেন পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশে চাকরির বাজারের কথা তুলে ধরে পরামর্শ দেন সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (সিইই) ভর্তি হতে। কামরুল ভর্তি হন ঠিকই, কিন্তু মন পড়ে থাকে পদার্থবিজ্ঞানে। খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয়শা ও কামরুলের হতাশা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয় শাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষের ছোট্ট একটা সিদ্ধান্তে। আয়শা এখন পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি সিএসইতে দ্বিতীয় স্নাতক ডিগ্রি নিচ্ছেন। আর কামরুল সিইই বিভাগের পাশাপাশি দ্বিতীয় স্নাতক করছেন পদার্থবিজ্ঞানে। ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর শাবিপ্রবির ১২৩তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে স্নাতকে একই সঙ্গে দুই বিষয়ে পড়াশোনা করে দুটি স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, কোনো বিভাগের শিক্ষার্থী তাঁর বিভাগের পাশাপাশি অন্য বিভাগের নির্ধারিত অতিরিক্ত ক্রেডিট সম্পন্ন করে একই সঙ্গে দুটি ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন। এ জন্য তাঁকে নিজের বিভাগের বাইরে অন্য বিভাগে ভর্তির আবেদন করতে হবে। ওই বিভাগের আসনসংখ্যার বেশি আবেদন জমা হলে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হতে হয়। গত বুধবার শাবিপ্রবির এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে আড্ডা হয় একই সঙ্গে দুই ডিগ্রি পেতে ভর্তি হওয়া প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তাঁরা সবাই নিজ বিভাগের পাশাপাশি সিএসই বিভাগ থেকে দ্বিতীয় ডিগ্রি নিচ্ছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে, চলতি ডিসেম্বর মাসেই তাঁরা একই সঙ্গে দুটি ডিগ্রি পেতে যাচ্ছেন। অমৃতা দাস বলেন, ‘পরিসংখ্যান ও সিএসইতে একসঙ্গে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় খুবই ভালো লাগছে।’ গণিত বিভাগের সাজিদ উল হাসান, মিনহাজুল ইসলাম, মাহমুদ হাসান, নিয়াজ শাহরিয়ার, বন ও পরিবেশ বিভাগের তৌহিদ আন নূর ও ওমর সোহরাব, পদার্থবিজ্ঞানের জয়ন্ত মোদক ও সৈয়দ ওমর ফারুক, পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মোহাম্মদ উল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক ও আবদুল্লাহ আল ফাত্তাহ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের রুহশান আহমেদ, রসায়নের সাইফুদ্দিন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আমিনুল ইসলামও একইভাবে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় ডিগ্রি নেওয়া প্রথম ব্যাচের বেশ কয়েকটি কোর্স নিয়েছেন সিএসই বিভাগের প্রভাষক শেখ নাবিল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে সুযোগ পেলে ভালো কিছু করতে পারে, তা আমি দেখেছি। অনেকেই খুবই ভালো করছে।’ সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. রেজা সেলিম বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী তাঁদের নিজেদের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পান না। এ রকম একটি উদ্যোগ তাঁদের মূল বিষয়ের পাশাপাশি তাঁর কাঙ্ক্ষিত বিষয়েও পড়ার এবং একই সঙ্গে দ্বিতীয় একটি ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে সিএসই বিষয়ে দক্ষ জনশক্তির ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই উদ্যোগ দেশের জন্যও মঙ্গলজনক।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.