মস্কো বিমানবন্দরে নেমে আসছে এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান। ওই বোয়িং ৭৪৭ বিমানে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। অথচ রানওয়ের মাটি ছোঁয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে বিমানের চাকা বেরলো না!
বড়সড় দুর্ঘটনার আশংকায় মস্কো এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর কর্মীরা বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলটের সঙ্গে।
অনবরত বিপদ সংকেত পাঠাচ্ছেন ককপিটে। কিন্তু, কোনো সাড়া মিলছে না। অবশেষে একেবারে শেষ মুহূর্তে নেমে এল চাকা। এড়ানো গিয়েছিল দুর্ঘটনা।
২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ মস্কো সফরে গিয়েছিলেন। তার বিশেষ বিমান যে বিমানবন্দরে নামার আগেই এমন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, সে ‘প্রমাণ’ মিলেছে ওই বিমানের ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার (এফডিআর) থেকেও।
উড়ানের সময় বিমানের প্রতি সেকেন্ডের তথ্য ওই যন্ত্রে রেকর্ড করা থাকে। সেখানেই দেখা গিয়েছে, ওইদিন বিমানের চাকা নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে নেমে এসেছিল।
ওই যন্ত্রে রেকর্ড থাকা তথ্য বলছে, মনমোহনের মতো ভিভিআইপি যাত্রী নিয়ে বিমানটি ‘ইলেকট্রনিক গ্লাইড স্লোপ’-এর নির্ধারিত উচ্চতার থেকে অনেক নীচে দিয়ে উড়ছিল এবং বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই উড়েছিল। সেই সময় এটিসি থেকে বার্তাও পাঠানো হয়েছিল বার বার। এর পরেই চাকা নেমে আসে।
‘ইলেকট্রনিক গ্লাইড স্লোপ’ বিমানের অবতরণের সময় পথ নির্দেশ করে। সেই পথ মেনেই রানওয়ের মাটি স্পর্শ করে বিমান। কিন্তু, ওইদিন তা হয়নি।
কেন? বার বার বিপদ সংকেত পাঠানো সত্ত্বেও কেন বিমানের চাকা নামানো হয়নি? বিমানে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কী? সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনো মুখ খোলেননি।
তবে পাইলটদের একটা অংশের মতে, ঘটনাটি খুবই অস্বাভাবিক। একে তো ‘ইলেকট্রনিক গ্লাইড স্লোপ’-এর নির্দেশ মানা হয়নি। তার উপর এটিসি বার বার বিপদ সংকেত পাঠিয়েছে। সে সবকেও গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
যদি যান্ত্রিক কোনো ত্রুটির জন্য এটা হয়ে থাকে, তবে সেটা খুবই মারাত্মক বলে জানাচ্ছেন তারা। তবে অন্য একটা অংশের মতে, যে ল্যান্ডিং গিয়ার নামালে বিমানের চাকা পেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে তা বের করলে প্রচণ্ড শব্দ হয় বিমানের ভেতরে।
মনমোহনের মতো এমন একজন ভিভিআইপি বিমানে থাকায় সেই শব্দ যাতে তাকে বেশিক্ষণ সহ্য করতে না হয়, সেজন্যও শেষ মুহূর্তে ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো হতে পারে। কিন্তু, সেই সিদ্ধান্ত যে বিপদ ডেকে আনতে পারত, তাও মেনে নিচ্ছেন ওই পাইলটরা।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.