মেয়েটির বয়স মাত্র এক বছর, আর ওজন মাত্র ৮ কেজি। কিন্তু সেই মেয়েই সাড়ে তিন কেজি ওজনের এক সন্তানের জন্ম দিয়েছে! এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে তামিলনাড়ুর মেট্টুপালায়ামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
বিষয়টি শুনতে যতই অদ্ভুত লাগুক, চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই ধরনের ঘটনার নজির রয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এরকম ঘটনাকে বলা হয় ফেটাস-ইন-ফেটু, অর্থাৎ একটি শিশুর মধ্যে আর একটি শিশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপিত হওয়া।
বলা হয়, কোনও শিশু গর্ভে থাকাকালে তার যমজ ভাই বা বোনের ভ্রূণ আলাদাভাবে বেড়ে না উঠে অনেক সময় ওই শিশুটির শরীরের অভ্যন্তরেই বেড়ে উঠতে থাকে। পরে সেই শিশুর জন্ম হওয়ার পরেও অনেক সময় তার শরীরের ভেতরে স্থাপিত সেই ভ্রূণের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। তখন অপারেশনের মাধ্যমে বের করে আনতে হয় সেই ভ্রূণটিকে। ফলে কার্যত বিষয়টি একটি সন্তানের জন্মলাভেরই চেহারা নেয়। ৫ লক্ষ শিশু জন্ম নিলে তাদের মধ্যে মাত্র এক জনের মধ্যে ফেটাস-ইন-ফেটু দেখা যায়।
তামিলনাড়ুর শ্রমিক রাজু ও সুমতির সন্তান নিশা ছিল তেমনই বিরল এক সন্তান। ছোটবেলা থেকেই নিশার পেটটা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বড়। রাজু আর সুমতি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু দিনে দিনে নিশার পেটের আয়তন বাড়তেই থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস ও খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। চিন্তিত রাজু আর সুমতি মেয়েকে নিয়ে যান ডাক্তারের কাছে।
ডাক্তার ডি ভিজয়গিরি শিশুটিকে দেখে প্রথমে ভেবেছিলেন, তার পেটে হয়তো কোনো সিস্ট কিংবা টিউমার হয়েছে। কিন্তু আলট্রাসনোগ্রাফি ও স্ক্যান রিপোর্ট আসার পরে তিনি দেখেন, বিষয়টি অন্যরকম— নিশার পেটের ভেতর বেড়ে উঠছে একটি ভ্রুণ, যা নিশারই শরীরের রক্তে ও খাদ্যে পুষ্ট হয়ে উঠছে।
ডাক্তার ভিজয়গিরি অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানিয়েছেন, অপারেশনটি মোটেই সহজ ছিল না। কারণ নিশার গর্ভস্থ ভ্রূণটির সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল নিশার বাম কিডনি, প্যানক্রিয়াসের মতো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। কিন্তু সৌভাগ্যবশত ডাক্তারেরা সেই অপারেশনে সফল হন। নিশার গর্ভ থেকে বের করে আনা হয় সাড়ে তিন কেজি ওজনের ভ্রূণটিকে। কার্যত এটি নিশারই সন্তান, কারণ তার শরীর থেকেই বার করা হয়েছে ভ্রূণটিকে।
ভ্রূণটিকে অবশ্য বাঁচানো সম্ভব ছিল না। তবে তা নিয়ে আক্ষেপ নেই রাজু আর সুমতির। তদের একরত্তি মেয়েটি যে বিপদমুক্ত, তাতেই তারা খুশি।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.