ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বেশিরভাগ সদস্যই ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা খুবই কম জানে। আইএসের জঙ্গিগোষ্ঠীটির ফাঁস হওয়া নথি এবং সংগঠনটির পুরনো কিছু সদস্যের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা এপি।
এপি’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আইএসে যোগ দেয়া সদস্যদের মধ্যে ৭০ শতাংশের ইসলামের শুধু মৌলিক জ্ঞান আছে। সিরিয়ার সাইট জামান আল-অসেলের সংগৃহীত হাজার হাজার নথি বিবেচনা করে সংবাদ সংস্থাটি জানাচ্ছে, ২৪ শতাংশ আইএস সদস্যের ইসলাম সম্পর্কে ধারণা ‘মধ্যম’ পর্যায়ের। তাদের মধ্যে শুধু ৫ শতাংশ কুরআন মুখস্থ পারে।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেয়া ৪০৩০ জনের পূরণকৃত ফরম থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। আইএসে যোগদানের সময় যোগদানকারীদের যে ফরম দেয়া হয়, সেখানে তাদের ইসলামের জ্ঞান সম্পর্কে বোঝার জন্য কিছু প্রশ্ন করা হতো।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, আইএসে যোগদান করতে আসা বেশিরভাগ নতুন সদস্যই ফরমে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারেননি কিংবা হিমশিম খেয়েছেন। দু’জন ব্রিটিশ এবং এক ইউরোপীয় বাসিন্দা বলেন, তারা জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য আমাজন থেকে ইসলাম ফর ডাম্মিস এবং দ্য কোরইন ফর ডাম্মিস ক্রয় করেছিলেন।
তারা বলেন, যোগদানের ফরম পূরণের সময় ইমামদের একটি অংশ তাদের ইসলাম সম্পর্কে বোঝাতেন। ওইসব ইমাম ‘শহীদদের’ প্রশংসা করতেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইসলামিক স্টেটে যোগদানের ক্ষেত্রে ধর্ম আসলে কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। ইসলাম সম্পর্কে যাদের ধারণা কম এবং ধর্মে যার বিশ্বাস যত কম তাকে তত সহজে যোগদান করানো যায়।
ব্রাসেলসভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, এসব জঙ্গি যতটা না গোড়া ইসলামপন্থী তার চেয়ে বেশি ইসলামপন্থী ধর্মান্ধ। নিঃসঙ্গ, অযোগ্য এবং সামাজিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ তরুণরাই আইএসের দিকে বেশি ঝুঁকছে। তবে তুর্কি সীমান্তে কড়াকড়ি এবং রণাঙ্গনে তাৎপর্যপূর্ণ পরাজয়ের কারণে আইএসের বিদেশী যোদ্ধা নিয়োগের প্রবণতা দিন দিনই কমছে।
এপির অনুসন্ধানের এই ফল আইএসের ইসলাম সম্পর্কে বিশ্বাস এবং ইসলাম প্রচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
যেমন ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গের বাসিন্দা করিম মোহাম্মদ আগাদ সিরিয়া আইএসে যোগদান শেষে আবার দেশে ফেরত আসেন। এরপর গ্রেফতার করা হলে আদালতে তিনি স্বীকার করেন যে তারা সিরিয়ায় যাওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মের কোনো ভূমিকা ছিল না। তাদের নেকড়ের মতো ফাঁদে ফেলেছিল আইএস। আদালত তাকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেন।
উদাহরণ আরও আছে। গত মাসে ফ্রান্সের নিসে শহরে ট্রাক চাপা দিয়ে ৮৪ জনকে হত্যাকারী যুবক ধূমপান করত, মদ খেত এবং ইসলামবিরোধী প্রায় সব কাজই করত। এমনকি সে তার স্ত্রীকেও পেটাত।
সিরতে থেকে বিতাড়িত হচ্ছে আইএস: লিবিয়ার উপকূলীয় নগরী সিরতে আইএসের হাত থেকে মুক্ত করার পথে আরও অগ্রসর হয়েছে লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বাহিনী। নগরীর কেন্দ্রীয় ‘ডিস্ট্রিক্ট টু’ নিজেদের দখলে নিয়েছে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
তাদের দাবি অনুযায়ী শিগগির সমগ্র শহরের পুনর্দখল নিতে সক্ষম হবেন তারা। মঙ্গলবার সিরতের পার্শ্ববর্তী শহর মিসতারায় লিবিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ‘ডিস্ট্রিক্ট টু’ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর এখন ‘ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান’ দখলের জন্য লড়াই চলছে। এটিই এই নগরীতে আইএসের দখলে থাকা সর্বশেষ এলাকা।
সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ‘ডিস্ট্রিক্ট টু’ মুক্ত করা হয়েছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.