প্রতীকী ছবিটি টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে নেওয়া।
ভারতের মণিপুর রাজ্যের ইরম শর্মিলা চানুকে কে না চেনে! মণিপুরে আফস্পার (সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন) বিরুদ্ধে ১৬ বছরের অনশন করে প্রতিবাদী এই নারী নজর কেড়েছেন বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের। অন্যদিকে এই মণিপুরেই মাত্র পাঁচ হাজার রুপিতে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কিশোরীরা। নারী পাচারের চক্র এতটাই সক্রিয় ভারতের এই রাজ্যে।
কেন্দ্রীয় পুলিশের জরিপের সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভারতে সবচেয়ে বেশি নারী পাচার হয় এই রাজ্যটিতেই। আর এই তথ্যে বিব্রত রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিং।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুরের একদিকে মিয়ানমার। রাজ্যের অপর তিনদিকে নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও আসাম। অত্যন্ত দুর্গম এই রাজ্যটিতে দরিদ্রতার সুযোগে সীমান্ত পার করে মণিপুরি কিশোরী-যুবতীদের পাচার করা হচ্ছে মিয়ানমারে। সেখান থেকে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পতিতালয়ে পৌঁছে যাচ্ছে মণিপুরের নারীরা।
ভৌগোলিক কারণে চেহারা সামঞ্জস্য থাকায় উত্তর-পূর্ব ভারতের নারীদের চাহিদা রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পতিতালয়ে।
ভারতের কেন্দ্রীয় পুলিশের প্রতিবেদনে জানা গেছে, মণিপুরের পাশের রাজ্য মিজোরাম থেকে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে মিয়ানমারের কাচিন এবং আরাকান (রাখাইন) প্রদেশ পর্যন্ত এলাকায় চলে নারীপাচারের বিশাল ব্যবসা। চট্টগ্রাম, টেকনাফ, কক্সবাজার ছাড়িয়ে বঙ্গোপসাগরের পথ ধরে আন্দামান সাগর হয়ে ভিয়েতনামের উপকূল ধরে মানবপাচারের পথটি কুখ্যাত।
অন্যদিকে স্থলপথে মিজোরাম হয়ে পার্বত্য বাংলাদেশ পেরিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। সেখান থেকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার পার্বত্য সীমান্ত পার হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাচার হচ্ছে মণিপুরি নারীরা। উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যগুলো থেকেও এভাবেই নারী পাচার হয়।
মণিপুর পুলিশের দাবি, রাজ্যের থৌবাল জেলা আন্তর্জাতিক নারী পাচারের ঘাঁটি। বারবার এখানে অভিযান চালানো হয়। উদ্ধার করা হয় নারীদের। কিন্তু কোনোভাবেই নারীপাচারের এই চক্রটি ধ্বংস করা যাচ্ছে না। পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, মণিপুর এবং এর পাশের রাজ্যের সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর অর্থের অন্যতম উৎস এই নারীপাচার। আর এই জঙ্গি সংগঠনের মদদে ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে নারীপাচারকারী চক্র।
পুলিশের প্রতিবেদনে প্রকাশ, নারী পাচারকারীদের এই অবৈধ ব্যবসা ক্রমশ ফুলে-ফেঁপে উঠছে মণিপুরে। ক্রমশ তার জাল ছড়াচ্ছে নাগাল্যান্ড, মিজোরামসহ পাশের বিভিন্ন রাজ্যে। আর সবার অলক্ষে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে মণিপুরের হাজারো কিশোরী-তরুণী।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.