গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ মারজানের পরিচয় পাওয়ার পর পুলিশ তাঁর বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ মুখ খোলেনি।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আফুরিয়া গ্রাম থেকে মারজানের বাবা নাজিম উদ্দিনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
মারজানের মা সালমা খাতুন এখন পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে জানিয়েছে।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হাসান জানান, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
এর আগে মারজানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করে পুলিশ।
মারজানের প্রকৃত নাম নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান। মো. নাজিম উদ্দিন ও সালমা খাতুনের ১০ সন্তানের মধ্যে মারজান চতুর্থ। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে ‘পরিবারবিচ্ছিন্ন’ ছিলেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
মারজানের বিষয়ে তথ্য চেয়ে গত শুক্রবার পুলিশের বিশেষ অ্যাপ ‘হ্যালো সিটিতে’ ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে তাঁকে গুলশান হামলার ‘অপারেশন কমান্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর বয়স ২২ বা ২৩ বছর বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।
পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলমগীর কবীর আজ সোমবার রাত পৌনে ৯টায় বলেন, ‘মারজানের পরিচয় মিলেছে। পুলিশের একটি দল বাড়ি গিয়ে তাঁর প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগের ছাত্র তিনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ ছাত্রদের তালিকায় মারজানের নাম নেই বলে জানা গেছে।’
পুলিশ সুপার আরো জানান, ‘বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের বাইরে থাকায় সাংবাদিকদের জানানো সম্ভব হয়নি। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইন্টলিজেন্স বিভাগ বিষয়টি তদারকি করায় বিষয়টি সম্পর্কে খুব বেশি জানতে পারিনি।’
মারজানের বাবা মো. নাজিম উদ্দিন জানান, তাঁর পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। এর মধ্যে মারজান চতুর্থ। মারজানের পড়াশোনা শুরু হয় আফুরিয়া পাটকিয়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাবনার আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে। এরপর তিনি দীর্ঘদিন পাবনার বাঁশবাজার মসজিদে মক্তব বিভাগে ছাত্রছাত্রী পড়াতেন। পরে ২০১৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগের ভর্তি হন।
বছর খানেক আগে ঈশ্বরদী উপজেলার কালিকাপুরে আপন খালাতো বোনকে বিয়ে করেন মারজান। তবে গত আট মাস ধরে মারজান স্ত্রীসহ কোথায় আছেন তা জানেন না বলে জানান মো. নাজিম উদ্দিন।
মারজানের বাবা আরো বলেন, ‘ছেলের এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানতে পেরে তাঁর মা সালমা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল সোমবার রাতে তাঁকে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমার ছেলে এ ধরনের ঘটনায় যুক্ত থাকলে আমরা তাঁর দায়িত্ব নিতে চাই না।’
গত শুক্রবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার মূল দায়িত্বে থাকা আরেক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁর সাংগঠনিক নাম মারজান। তাঁর ছবি পাওয়া গেছে। নিজের ফেসবুকে মারজান গুলশান হামলার ছবি আপলোড করেছিলেন।
মনিরুল ইসলাম আরো জানিয়েছিলেন, গোপন টেক্সট বা আপসের মাধ্যমে গুলশান হামলার ছবি মারজানের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তিনি তা ওপেন করেছিলেন। পুলিশ এক জঙ্গির মোবাইল থেকে তা উদ্ধার করেছে। মারজান সম্পর্কে জানা যায়, তিনি উগ্রবাদী চিন্তার ধারক। জেএমবির হাই-প্রোফাইল জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁর রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ।
গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর এসব জঙ্গির সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়। পরবর্তী হামলার জন্য ছকও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু রাজধানীর কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে তাঁদের সেই ছক ভেস্তে গেছে।
Your email address will not be published. Required fields are marked *
Save my name, email, and website in this browser for the next time I comment.